ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আনন্দের বাজার
গ্রাহকের ৩১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেল সিআইডি
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আনন্দের বাজার লিমিটেড। মার্কেটিং, গ্রোসারি পণ্য সরবরাহকারী ও আদমানী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১০ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে ২০২০ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটি লোভনীয় অফার দিয়ে মোটরসাইকেল, সেলফোন ও ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী বিক্রি শুরু করে। পরবর্তী এক বছরে বিভিন্ন অর্ডারের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের ৩১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে আসার পর মামলা করেছে সংস্থাটি।
গ্রাহকদের ভাষ্যমতে, নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোটরসাইকেল, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করত আনন্দের বাজার। শুরুতে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে কিছু গ্রাহকের কাছে পণ্য সরবরাহ করে আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালায় প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি নিজেদের মানুষকেও গ্রাহক সাজিয়ে ফেসবুকে পণ্য বুঝে পাওয়ার পোস্ট দেওয়াতেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধর আহামুদুল হক খন্দকার।
এইসব পোস্টে খুব অল্প সময়েই অনেক গ্রাহক তৈরি হয় আনন্দের বাজারের। পরে ২০২১ সালে গুলশানের জব্বার টাওয়ারে আনন্দের বাজারের অফিসটি কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
নির্ধারিত সময়ে কাঙ্ক্ষিত পণ্য বুঝে না পেয়ে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে গুলশান থানায় আনন্দের বাজারের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক গ্রাহক। সেই মামলার সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নেমে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট।
পাঁচ মাসের অনুসন্ধান শেষে গ্রাহকের অর্ডারের বিপরীতে আনন্দের বাজারের ৩১৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯০৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় সংস্থাটি। পরে গত বুধবার গুলশান থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে সিআইডি। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে আনন্দের বাজারের কর্ণধর আহামুদুল হক খন্দকারকে। আর দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
মামলার বাদী সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইমের উপপরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী এক গ্রাহকের দায়ের করা একটি মামলার সূত্র ধরে আনন্দের বাজার লিমিটেডের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে শহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবরের মধ্যে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে মোটরসাইকেল, মোবাইল ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী সরবরাহের কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে গ্রহণ করে আনন্দের বাজার। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সরবরাহ না করে প্রতারণার মাধ্যমে সর্বমোট ৩১৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯০৬ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। পরে এই আত্মসাতের অর্থ আহামুদুল হক খন্দকারের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আহামুদুল হক খন্দকার এবং তার প্রতিষ্ঠান আনন্দের বাজারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং এর অভিযোগ সত্য প্রতীয়মান হয়।
সম্প্রতি একের পর এক ই-কমার্স কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আসছে। এর মধ্যে ইভ্যালি, ধামাকা শপিং, ই-অরেঞ্জ, নিরাপদডটকম, কিউকম ও এসপিসি ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাওনা না দেওয়া অর্থ পাচারের অভিযোগও উঠেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, ওই ৬ কোম্পানি অন্তত ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই ৬টিসহ মোট ১২টি ই-কমার্স কোম্পানি গ্রাহক ও পণ্য সরবরাহকারীদের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না।
টিটি/