‘আকাশ নীল' এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতারণা
চড়তেন ৬০ লাখ টাকার গাড়িতে, ফ্ল্যাট কেনেন ৩ কোটিতে
লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান 'আকাশ নীল' এর প্রতারণার মূলহোতা এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, রবিবার (২০ মার্চ) র্যাবের বিশেষ এক অভিযানে ঢাকা ও ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
চক্রটি ৩ দফায় ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। পণ্য বা টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডি মশিউর রহমান ওরফে সাদ্দাম (২৮) ধানমন্ডিতে কেনেন তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট। চড়তেন ৬০ লাখ টাকার গাড়িতে। প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন দিতেন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুর দেড়টায় রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, মশিউর ও রনি ২০১৯ সালে ‘আকাশ নীল’ নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খোলেন। ট্রেড লাইসেন্সও নেন। প্রথমে শাক-সবজি কিনে অনলাইনে হোম ডেলিভারি শুরু করেন। করোনায় সুবিধা করতে না পেরে শুরু করেন প্রতারণামূলক ব্যবসা। কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মতো ডিসকাউন্ট অফারে মোটরসাইকেল বিক্রি শুরু করেন। ৩ দফায় তিনি ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নেন প্রায় ৩২ কোটি টাকা।
গত সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে গ্রাহকরা পণ্য অথবা টাকা ফেরতের চাপ দিতে শুরু করলে অফিস গুটিয়ে নেন। নিজেদের ফোন বন্ধ রাখেন। একপর্যায়ে দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকিট নেন এমডি মশিউর।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রথম ক্যাম্পেইন ছিল গত মে মাসে। সেসময় ৩০ শতাংশ ছাড়ে দুই মাসের মধ্যে ডেলিভারির আশ্বাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান।
গত বছরের জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির নিশ্চয়তায় ১ হাজারের অধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে মোটরসাইকেলের তৃতীয় ক্যাম্পেইনে ২৩ শতাংশ ছাড়ে ২৫ দিনের মধ্যে সরবরাহের আশ্বাসে ৯ হাজারের অধিক মোটর সাইকেলের অর্ডার পান। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি তারা লোভনীয় ছাড়ে মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, গৃহস্থালির অন্যান্য পণ্য বিক্রি নিয়েও অফার দেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রাহকদের টাকা সরাসরি মশিউরের নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতো। অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো গেটওয়ে সিস্টেম থাকলেও সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হতো। ই-কমার্স নীতিমালার কারণে পণ্য ডেলিভারি না হলে টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকার কারণে সেসব টাকা গ্রাহকদের রিফান্ড করা হতো। সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানকৃত অর্থ নিয়ে তারা প্রতারণা করতো।
জিজ্ঞাসাবাদে বরাতে র্যাব জানায়, আকাশ নীলে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। যাদের মাসিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বেতন দেওয়া হতো। গ্রাহকের টাকায় ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। রয়েছে টয়োটা প্রিয়াশ ও সিএইচআর মডেলের দুটি দামি গাড়ি। এছাড়া কোম্পানির ৪ টি টাটা পিকআপ রয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি মশিউর দুবাই পালানোর জন্য ভিসা ও বিমান টিকিট ক্রয় করেন। অবশেষে তাদের ধরা পড়তে হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস