পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক
অসাধু মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে পুলিশ
সারাদেশে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পুলিশ। এরই মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি শুরু করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট বানিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালাতে বলা হয়।
শনিবার অনুষ্ঠিত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ৫১২ লিটার সয়াবিন তেলসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবেক এক কৃষি কর্মকর্তাকে। ঢাকার বাইরেও মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশসহ প্রশাসন। পবিত্র রমজানে অধিক দামে বিক্রির জন্য ৫১২ লিটার সয়াবিন তেল মজুদ করেছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপসহকারী কর্মকর্তা মো. লায়েকুজ্জামান। লালমাটিয়ার বাসায় গত শুক্রবার অভিযান চালিয়ে সয়াবিন তেলসহ তাকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানাপুলিশ।
এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘লায়েকুজ্জামান সর্বশেষ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা হিসেবে ফরিদপুরে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায়। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে মোহাম্মদপুরের নজরুল রোড এলাকার একটি বাসায় থাকেন। সেখান থেকেই এসব তেল উদ্ধার করা হয়।’
ডিসি বিপ্লব কুমার বলেন, ‘একটি পাইকারি দোকান থেকে গত ৬ মার্চ লায়েকুজ্জামান ৪০ লিটার তেল কেনেন। পরে আরো বেশকিছু দোকান থেকে কেনেন ৪৭২ লিটার সয়াবিন তেল। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, রমজানে দাম আরো বাড়তে পারে, এমন আশায় তেল মজুদ করেছিলেন। কিন্তু তিনি এটা করতে পারেন না। এটা একটি ফৌজদারি অপরাধ। সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাকি তেল কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন, তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হবে।’
এদিকে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন তেল মজুদ রাখায় একটি দোকানের মালিক আবুল হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ জরিমানা করেন।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সংবাদের ভিত্তিতে শহরের গোডাউন রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিউ আল-আমিন স্টোরের গোডাউনে ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল মজুদের সত্যতা পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ইউএনও ইমরান হোসেন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে। কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাই। দোকানি অতিরিক্ত তেল মজুদ করে রেখেছিলেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা পুলিশের সব ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সে জন্য নজরদারি চলছে।’
কেএম