বাংলাদেশ থেকে ৪৩ হাজার কর্মী নেবে দক্ষিণ কোরিয়া
ছবি সংগৃহিত
বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে দক্ষ শ্রমিক নেবে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির শিল্পখাতে জনবল নেয়ার জন্য কোরীয় ভাষায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)।
নতুন খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক এই ঘোষণা দেন। এছাড়া বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) থেকে ১১তম এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) প্রোগ্রামের আওতায় কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
ইপিএস হলো বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য একটি কোরিয়ান পদ্ধতি। এর মাধ্যমে কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষা এবং দক্ষতা স্তর মূল্যায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের শ্রমিকদের সেদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয় কোরিয়ান সরকার।
রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং সিক জানান, বিদ্যমান উৎপাদন ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে মাছ ধরা ও নির্মাণ কাজ যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বোয়েসেল পরীক্ষা এবং আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য লটারির ঘোষণা করবে। এবার ৩০ হাজার কর্মী নেবে দক্ষিণ কোরিয়া। আগামী ১১ মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ভাষার পরীক্ষা দিতে মার্চের প্রথম দিকের মধ্যে নিবন্ধন করার আহ্বান জানিয়েছে দূতাবাস।
দুতাবাস থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবেদন করার সময় প্রত্যেক আবেদনকারী কেবল চারটি খাতের একটিতে আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া পরীক্ষার্থীরা ১২তম ইপিএস টপিকের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে ইপিএস কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি কর্মী পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে ৫ হাজার ৮৯১ জন এবং ২০২৩ সালে ৪ হাজার ৮০৪ জন কর্মী ইপিএস’র আওতায় কোরিয়া গেছেন। এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মসূচির মাধ্যমে ১৬টি দেশ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার অদক্ষ বিদেশি কর্মী আনার পরিকল্পনা করছে কোরিয়া।
রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সিক চলতি বছর কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় মৎস্য আহরণ ও নির্মাণ ব্যবস্থা সংযোজন করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বোয়েসেল এইচআরডি কোরিয়ার সঙ্গে ইপিএস নিয়ে সক্রিয় ও সৃজনশীলভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, কোরিয়া এরআগে জার্মানিতে খনি শ্রমিক ও নার্স পাঠিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ শ্রমিক পাঠায়। এটি জাতীয় প্রকল্পগুলোর জন্য বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস সরবরাহ করে এবং ফলস্বরূপ, কোরিয়া একটি সমৃদ্ধ দেশ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভবিষ্যতে কোরিয়ায় আরও শ্রমিক পাঠানোর জন্য নেপালের সফল উদাহরণটি দেখুন। নেপালি শ্রমিকরা কোরিয়ান সমাজে খুব ভালোভাবে বসতি স্থাপন করেন। তারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করেন। সে কারণে নিয়োগকর্তাদের কাছে তাদের ভালো খ্যাতি রয়েছে। দেশে ফেরার পর বিদেশফেরত ওইসব কর্মীদের বৈঠক বেশ সক্রিয় থাকে।
আবেদনের যোগ্যতা: প্রার্থীকে কোরিয়ান ভাষা পড়া, লেখা ও বোঝার পারদর্শিতা থাকতে হবে; শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি/সমমান; বয়সসীমা ১৮ থেকে ৩৯ বছর (জন্ম তারিখ ফেব্রুয়ারি ২০, ১৯৮৫ হতে ফেব্রুয়ারি ২০, ২০০৬ এর মধ্যে হতে হবে); পাসপোর্টের মেয়াদ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ পর্যন্ত হালনাগাদ থাকা সাপেক্ষে; পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে নাম ও জন্ম তারিখ এবং ছবির মিল থাকতে হবে। 3D (Dirty, Difficult and Dangerous) কাজ করার আগ্রহ থাকতে হবে; উৎপাদন শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, কনস্ট্রাকশন ও মৎস্য খাতে প্রশিক্ষণসহ বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; কালার ব্লাইন্ডনেস বা রও বোঝার সক্ষমতার সমস্যা মুক্ত হতে হবে; পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ ও কথোপকথনে মার্জিত হতে হবে।
এছাড়া মাদকাসক্ত/সিফিলিস শনাক্ত ব্যক্তি, ফৌজদারি অপরাধে জেল বা অন্য কোনো শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানকারীকেউ এবং দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে এমন ব্যক্তি অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
আবেদনের প্রক্রিয়া: আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আবেদনের সময়সীমা: প্রার্থীরা ২০ ফেব্রুয়ারি, থেকে শুরু করে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ইং বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হবে আগামী ৭ মার্চ।