জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও মর্মাহত প্রকাশ করেছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
পাশাপাশি, তিনি তাবলিগ জামায়াতের নেতৃত্বকে বিভেদ ভুলে ঐক্যের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান, যাতে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা অক্ষুণ্ণ থাকে।
মাওলানা আজহারী তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় আউস ও খাযরাজ গোত্র শত বছরের শত্রুতা ভুলে নবীজির তাওহিদের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে এক ঘণ্টার মধ্যেই পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গিয়েছিল। তারা শিখেছিল, বড়ত্ব কেবল আল্লাহর জন্য, আর মানুষের উচিত আল্লাহর ইচ্ছার সামনে নিজেদের সমর্পণ করা।
তিনি বলেন, নবীজির এই শিক্ষাই বর্তমান সময়ে তাবলিগ জামায়াতের সাথীদের জন্য প্রাসঙ্গিক। নেতৃত্বের উচিত দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উম্মাহ স্পিরিটকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধানের পথে এগিয়ে আসা।
আজহারী সতর্ক করে বলেন, তাবলিগ জামায়াতের এ বিভক্তি বাংলাদেশের মুসলিমদের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যেই এ ঘটনাকে বিতর্কিত করে ইসলামি আন্দোলনগুলোকে দুর্বল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
তিনি আত্মসমালোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, তাবলিগ জামায়াতের সাথীদের মাঝে ‘এক উম্মাহ’ ধারণাটি যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হওয়াই আজকের এই সংঘাতের মূল কারণ। অন্যান্য দেশে তাবলিগ জামায়াতের কার্যক্রম ভিন্ন মতাদর্শের মধ্যেও সংঘাতহীনভাবে পরিচালিত হয়। কারণ তারা উম্মাহর স্বার্থকে বড় করে দেখে।
মাওলানা আজহারী শামের মুসলিমদের উদাহরণ টেনে বলেন, শামে একাধিক গ্রুপ ভিন্ন মতাদর্শ থাকা সত্ত্বেও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশের মুসলিমদেরও উচিত দলীয় স্বার্থকে ছাড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলিম স্বার্থ রক্ষা করা।
তাবলিগের সাথীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আল্লাহর নামে সংযত হোন। মুসলিম ভাইয়ের রক্ত ঝরানো কখনোই নবীজির উম্মতের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করুন। নবীজি আসাবিয়্যাত বা গোত্রীয়তার ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তাই এ ধরনের প্রবণতা থেকে দূরে থাকুন।
সবশেষে মাওলানা আজহারী তাবলিগ জামায়াতের মুরুব্বিদের প্রতি ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের ইসলামি ঐক্য রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর বর্তায়। তাই দ্রুত এই সংঘাত নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।