চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ এবং (শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত) দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে শুরু হয়েছে ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের সমাবেশ। এতে দেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ৩৫ প্রত্যাশীরা অংশ নিয়েছেন, বলে জানা গেছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে এ সমাবেশ শুরু হয়।
এসময় চাকরি প্রত্যাশীরা হাতে ‘উই ওয়ান্ট নো এজ লিমিট’, ‘চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ চাই’, ‘বয়সসীমা মুক্ত করি-স্বপ্ন গড়ি দেশ গড়ি’, ‘শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে বয়সসীমা উন্মুক্ত চাই’, ‘বৈষম্যবিরোধী দেশ গড়তে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ চাই’-ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ৩৫ প্রত্যাশী নেতা ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৫ প্রত্যাশী চাকরি প্রত্যাশীরা আসছেন। আমরা ৩৫ বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন হাতে নিয়ে, তবেই ফিরব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস না পাচ্ছি, আমরা শাহবাগ থেকে সরছি না।
তিনি আরো বলেন, অনেক আশ্বাস পেয়েছি, অনেক বলা হয়েছে যে এ নিয়ে সরকার ভাবছে। এখন মানুষ আমাদের হাসাহাসি করে। এভাবে আর কত! আজকে যদি দাবি না মানা হয়, আমরা লাগাতার কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি সেটা এই শাহবাগ থেকেই শুরু হবে।
সমাবেশে সংহতি জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সমাবেশে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শত রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয়বার যে নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেখানে আমাদের সবার আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল এ রাষ্ট্রের মধ্যে আর কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু এখনো চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ এর জন্য আমার সন্তানরা কষ্ট পাবে, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাবি আদায়ের জন্য দাঁড়াতে হবে এটা আমি কখনো আশা করিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তাহলে আবার কেন এ বৈষম্য (চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করা) থাকবে? এ বৈষম্য থাকতে পারে না। এটি অত্যন্ত একটি যৌক্তিক দাবি। আপনারাও ছাত্র ছিলেন, ছাত্র থেকে আন্দোলন করেছেন। আজকে এ ছাত্রদের প্রতি আপনাদের কেন সহমর্মিতা নেই? কেন দয়া নেই। আমি এটি আপনাদের কাছে জানতে চাই। কেন আপনারা কালক্ষেপণ করছেন? কেন তাদের দাবিকে মেনে নিচ্ছেন না। আমি আশা করি আপনারা এ যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন।
সমাবেশে অংশ নেয়া ৩৫ প্রত্যাশীদের ভাষ্য, সেশনজট, করোনাসহ নানা কারণে বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় এখন তারা ভুক্তভোগী। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীদের দাবি, তারা চাকরি চান না, অন্তত প্রতিযোগিতা করার সুযোগ চান। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বর্তমানে ৩০। এটাকে অযৌক্তিক ও বৈষম্য। বিশ্বের সব দেশেই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ ঊর্ধ্ব, তাহলে তারা কেন এই বৈষম্যের শিকার হবেন।
এর আগে সকাল ৯টায় একে একে শাহবাগে জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয় ৩৫ প্রত্যাশীরা। পরে সেখানে শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে দুপুর সোয়া ১টায় তারা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ের দিকে এগিয়ে যান। পরে সেখান থেকে ঘুরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন।
এই বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হাসান মাহমুদ নাছের বলেন, সমাবেশকারীরা তাদের আন্দোলন করতে পারেন, দাবি জানাতে পারেন। এতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তবে জনদুর্ভোগ ও জননিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য আমরা অবস্থান নিয়েছি।