নির্ধারিত সময়েই মতিঝিল পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল
এক হল দিয়াবাড়ি-মতিঝিল
রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। সর্বশেষ সেগমেন্ট উঠানোর মধ্য দিয়ে পিয়ারের উপর ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এরমধ্য দিয়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল পর্যন্ত শতভাগ ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ করল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এখন দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আর কোন শূন্যস্থান থাকল না।
অপরদিকে মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলের জন্য মোট ২৪ সেট রেল কোচ আনা হচ্ছে। এরমধ্যে নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ি ১২ সেট রেল কোচের মধ্যে ১০ সেট ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। বাকি দুই সেট কোচ জাপানের কুবে বন্দর থেকে মংলার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। শিগগির ওই দুই সেট রেল কোচও ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাকি ১২ সেট রেল কোচ আগামী জুন মাসের মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। দু'টি শান্টিং লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ইতোমধ্যে এসে যুক্ত হয়েছে দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল ডিপোতে।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. এন. ছিদ্দিক বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এটি একটি বড় এচিভমেন্ট। আমাদেরও টার্গেট ছিল জানুয়ারি মাসের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ শেষ করা। সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মতিঝিল পর্যন্ত রেল ট্র্যাক ও ইলেকট্রিক লাইনের পুল (ওসিএস মাস্ট) স্থাপনের কাজ করা। কবে নাগাদ এটি শেষ করতে পারব এ ব্যাপারে শিগগির আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিব।
১০ সেটি রেল কোচ ডিপোতে এসে পৌঁছেছে জানিয়ে মেট্রোরেল এমডি বলেন, অমিক্রণ পরিস্থিতি খারাপ না হলে আগামী জুনের মধ্যেই বাকি রেল কোচগুলোও চলে আসবে। সবকিছু নির্ভর করছে অমিক্রণের উপর।
ভায়াডাক্ট বসানো ছাড়াও রাজধানী বাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের অন্যান্য অংশের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। বিশেষ করে ইলেকট্রিক লাইন টানা, দুই পাশের প্যারাপেড ওয়াল নির্মাণ, স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে বিরামহীন। চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের একাংশ অর্থাৎ দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য মেট্রোরেল উম্মুক্ত করে দিতে দিনে রাতে কাজ চলছে এই অংশে। চলছে মেট্রোরেল ট্রেনের ট্রায়াল রানও। ইতিমধ্যে এই অংশে পরিচালনার জন্য ১০ সেট রেল কোচ ঢাকায় পৌঁছেছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল অংশে ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ এ মাসেই শেষ করার লক্ষ্য ছিল। এরই অংশ হিসেবে এই স্থানে দিনে রাতে কাজ চলছিল। সর্বশেষ ভায়াডাক্ট বসানোর বাকি ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ৫৮২ থেকে ৫৮৩ নম্বর পিয়ারের মধ্যে। এই অংশে নয়টি সেগমেন্ট ছিল। বুধবার রাতেই আটটি সেগমেন্ট বসানোর কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র একটি সেগমেন্ট দিনের বেলা বসানোর জন্য রাখা হয়েছিল। যাতে উৎসুক জনতা সেটি দেখতে পারেন। এ কারণেই বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ৫৮২ নম্বর পিয়ারের লাগোয়া সেগমেন্টটি উঠানো হয় পিয়ারের উপর। এরমধ্য দিয়ে সর্বশেষ ভায়াডাক্টটি বসানোর কাজ সম্পন্ন হল।
এখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে রেল লাইন (রেল ট্র্যাক) বসানোর কাজ চলবে। ইতোমধ্যে আগারগাঁও থেকে বাংলামোটরের দিকে পাঁচ দশমিক ৩ কিলোমিটার রেল লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশের কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। একই সঙ্গে এই অংশে ওসিএস মাস্ট বসানোর কাজও শেষ হয়েছে দুই পাশ মিলিয়ে আট কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এখন রেল ট্র্যাক ও ওসিএস মাস্ট বসাতে আর কোন বাধা থাকল না।
মেট্রোরেলের এক কর্মকর্তা জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে সবরকম চেষ্টা চলছে। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রকল্পের কাজে কিছুটা ধীর গতি আসলেও পরবর্তিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কাজের গতি বাড়াতে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যায়। যার ফলে কোভিড-১৯ অতিমারীতে এক দিনের জন্যও কাজ বন্ধ থাকেনি।
শুরুর দিকে দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী পর্যন্ত দিন-রাত কাজ হলেও রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ শুরুর পর থেকেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজ হয়েছে রাতের বেলা। কারণ ওই সময়টায় নগরীতে নিস্তব্ধতা নেমে আসে। যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ থাকে। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই মেট্রোরেলের কাজ রাতের বেলাতেই বেশি করা হয়।
মেট্রোরেল সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। এরমধ্যে উত্তরা সেন্টার স্টেশনের কাজে একটু বেশি সময় লাগেছ। ওই স্টেশনকে আইকনিক স্টেশন হিসেবে নির্মাণ কার হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, দৃষ্টিনন্দন এই স্টেশনটি নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এর বাইরে বাকি আটটি স্টেশনের প্রায় ৭৩ শতাংশ শেষ হয়েছে।
অপরদিকে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সাতটি স্টেশনের মধ্যে চারটি স্টেশনের কনকোর্স ছাদ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এগুলো হচ্ছে ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহাবাগ। এখন এই চারটি প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের কাজ চলছে। বাকি তিনটির কাজও দ্রুতগতিতে চলছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যেই মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ শেষ হবে এবং জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে।
/এএস