গাজীপুরে সংঘর্ষে আহত আরেক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত আরেক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত জালাল উদ্দিন (৪২) নামে আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত জালাল উদ্দিন নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। তিনি কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ফজল মোল্লার বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করে স্থানীয় ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। একই ঘটনায় আহত একই কারখানার নারী শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুন (২০) গুরুতর আহত হলে ঐ দিন তাকে ঢামেক নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত মোট চার জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, গত বৃহস্পতিবার কোনাবাড়ীর তুসুকা গ্রুপের কারখানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার রাতে শ্রমিক ও বহিরাগতসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আরো অজ্ঞাতনামা ১০০-২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তুসুকা গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ বাদী হয়ে কোনাবাড়ী মেট্রো থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় ইসলাম গ্রুপসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঐ ঘটনায় আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিনসহ অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হন। আহতদের মধ্যে শুরুতর অবস্থায় আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঐ দিনই আঞ্জুয়ারা খাতুন মারা যান। একই হাসপাতালে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শনিবার রাত ১২টার দিকে জালাল উদ্দিনও মারা যান।
জধানীর মিরপুর ১০ ও ১৩ এলাকার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে পোশাককারখানার কয়েক শ শ্রমিক। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শ্রমিকরা মিরপুর ১৩ নম্বর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে সাড়ে ১০টার দিকে তারা রাস্তা থেকে সরে যান। জানা গেছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেশির ভাগ মিরপুর-১৩ নম্বরের ভিশন, এমবিএম, লোডস্টার, সারোজ গার্মেন্টসসহ আশপাশের ১০টি গার্মেন্টসের শ্রমিক।
আশুলিয়ায় ১২ মামলায় আসামি সাড়ে ৩ হাজার। ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে পোশাকশ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের জেরে গত কয়েক দিনের বিক্ষোভ ও কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল রবিবার পর্যন্ত আশুলিয়া থানায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ, যানবাহন ও পুলিশের গাড়িসহ কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোনাবাড়ী থানায় এ পর্যন্ত ৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫ হাজারের বেশি আসামির মধ্যে ১১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।