তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠন,ছিল বড় হামলার পরিকল্পনা
পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের হাতে আটক জঙ্গি সংগঠন তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর তিন শীর্ষ নেতা। ছবি: সংগৃহীত
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ (আল-জিহাদী) নামে দেশে আরও একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত দুই থেকে তিন মাস ধরে সংগঠনটির কার্যক্রম চলে আসছে। আগামী বছর ২০২৪ সালে দেশে বড় হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানার পর সংগঠনটির শীর্ষ নেতা মো.জুয়েল মোল্লাসহ (২৯) তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। বাকি দু’জন হলেন, মো.রাহুল হোসেন (২১) ও মো. গাজিউল ইসলাম (৪০)।
আজ শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত এটিইউর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউর উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) (অপারেশনস) মোহা. আলীম মাহমুদ। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আলীম মাহমুদ বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে জুয়েলকে বাগেরহাট থেকে, জয়পুরহাট থেকে রাহুলকে ও রাজধানীর ভাসানটেক এলাকা থেকে গাজীউল ইসলামকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে জুয়েল এই সংগঠনের প্রধান। বাকি দুজন শীর্ষপর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি দু-তিন মাস হলো কার্যক্রম শুরু করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল ২০২৪ সালে দেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা করা।
তিনি বলেন, ‘আমরা গত কয়েক মাস ধরে গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে খবর পাচ্ছিলাম কিছু উগ্রবাদী মানুষ একত্রিত হচ্ছে, যারা কিনা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচাল করে উগ্রবাদী ব্যবস্থা কায়েমের জন্য তারা একত্রিত হচ্ছিল। আটককৃতরা সবাই আগে কোনো না কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। কিন্তু তারা নতুন লক্ষ্য নিয়ে একই ব্যানারে সবাই নতুন করে একত্রিত হচ্ছিল। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ও পোস্টের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে আসছিল। এই দলের প্রতিষ্ঠা ও প্রধান নেতা হলেন জুয়েল। আমরা প্রথমে জুয়েলকে বাগেরহাটের রামপাল থেকে আটক করি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুই শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়। তাদের আটকের সময় নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আটটি ব্যানার জব্দ করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি অর্থও সংগ্রহ করছিল। এই অর্থ দিয়ে তারা অস্ত্র কেনাসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য জসীম উদ্দিন রহমানির বক্তব্যে মূলত উদ্বুদ্ধ হন জুয়েল। পরে তিনি নতুন এই জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেন। জুয়েল নিজেও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। জসীম উদ্দিন রহমানি বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। জসীম উদ্দিন রহমানিকেও কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের।
সংগঠনটির অর্থের জোগানদাতা কারা এবং সদস্যসংখ্যা কত জানতে চাইলে আলীম মাহমুদ বলেন, ‘সংগঠনটিতে এখন পর্যন্ত ৮০-৯০ জন সদস্য আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের অর্থদাতা কে তা এখনো জানা যায়নি। তবে সংগঠনটির অর্থ সংগ্রহের কাজ করছিল রাহুল। এ ছাড়া রাহুল বোমা তৈরির দায়িত্বেও ছিল।’
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলার পরিকল্পনা ছিল কি না, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল মোল্লা নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য ছিলেন। পরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই সময়ে কারাগারে বসেই নিজের একটি সংগঠন করার পরিকল্পনা করেন। মাত্র ক্লাস সেভেন পাস জুয়েল মোল্লা পেশায় একটি বেকারির কর্মী ছিলেন। আর বাকি দুজন হিজবুত তাওহীদের সদস্য ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, রাহুল হোসেন পেশায় আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। প্রযুক্তির বিষয়ে জ্ঞান থাকায় রাহুল বোমা তৈরির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন হামলার জন্য। এ ছাড়া বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাহুল। রাহুল অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজও করছিলেন।