রাজধানীতে রাতে পিকআপ নিয়ে ডাকাতি, ছিনিয়ে নিচ্ছে সর্বস্ব
রাজধানীতে ভোররাতে চলাচলকারীদের টার্গেট করত একটি ডাকাতচক্র। চক্রটি ডাকাতির জন্য প্রথমে একটি পিকআপ ভ্যান ছিনতাই করত। এরপর সেই পিকআপে ঘুরে টার্গেট করা ব্যক্তিদের কাছ থেকে সোনার অলংকার, মোবাইল, টাকা ও ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেত। চাঞ্চল্যকর একটি ডাকাতির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রায় শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে এ দুর্ধর্ষ ডাকাত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৬ মে) মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান।
এর আগে সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের পল্টন মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন— সোহেল (৩০), আক্তার ওরফে সোহরাব (৩২), আবির হোসেন ওরফে রাসেল (২৫), মো. রনির (২৮)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, পিকআপ ও ডাকাতির টাকা এবং ৪টি স্মার্টফোন, ৩টি বাটন মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এ ডাকাত চক্র রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পিকআপ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ডকাতি করে আসছিল। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানটিও তারা ছিনতাই করেছে। ডাকাতির পর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করত তারা এবং এ সব ঘটনায় অনেকেই থানায় অভিযোগ না করার কারণে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল। তবে ডাকাতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা ফের ডাকাতি কাজে লিপ্ত হতেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসি বলেন, চক্রটির হাত থেকে রক্ষা পাননি পুলিশ সদস্যরাও। গত ১২ মে ভোরে এ চক্রের খপ্পরে পড়েন পুলিশের ঢাকায় কর্মরত স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একজন নারী কনস্টেবল। একই রাতে ধানমন্ডি এলাকায় একইভাবে আরেকটি ডাকাতি করে তারা। এছাড়া গত ১৩ মে তেজগাঁও ও বনানী থানা এলাকায় একইভাবে আরও দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটায় তারা।
হায়াতুল ইসলাম আরও বলেন, গত ১২ মে ভোর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) নারী কনস্টেবল নার্গিস আক্তার (৩৩) রিকশাযোগে ভিভিআইপি ডিউটির উদ্দেশে অফিস যাচ্ছিলেন। ভোর ৪টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনের মোড়ে পৌঁছামাত্র পেছন থেকে আসা একটি হলুদ ও নীল রংয়ের পিকআপ তার রিকশাকে চাপ দেয়। সেসময় পিকআপের পেছন থেকে দুজন লোক নেমে আসেন। তাদের একজন তার হাত ধরেন এবং অপরজন গলায় চাকু ধরেন। কনস্টেবলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার গলায় থাকা ১০ আনার একটি সোনার চেন ও হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। তারা ব্যাগে নগদ ৫ হাজার টাকা, ৪৫ হাজার টাকার একটি শাওমি নোট-৮ স্মার্টফোন, একটি বাটন ফোন ও এসবির আইডি কার্ড ছিল। ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পিকআপটি শাহজাহানপুরের দিকে চলে যায়।
পরে ভুক্তভোগী কনস্টেবল পল্টন মডেল থানা মামলা রুজু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রওশানুল হক সৈকতের নেতৃত্বে পল্টন মডেল থানার একটি বিশেষ টিম ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। পরে মহাখালী থেকে ওই ঘটনায় জড়িত চার জনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, তারা পিকআপটি ৫-৬ দিন আগে ছিনতাই করে নিজেদের দখলে নিয়েছেন। ছিনতাই করা পিকআপ নিয়ে তারা এসময়ে রাতে চলাচলরত পথচারী/রিকশা আরোহীদের সুবিধাজনক স্থানে গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি করে আসছিলেন। গত ১২ মে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় একটি এবং গত ১৩ মে তেজগাঁও ও বনানী থানা এলাকায় একইভাবে দুটি ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত করেছেন তারা।
গ্রেপ্তার সোহেলের বিরুদ্ধে ২টি, আক্তার ওরফে সোহরাবের বিরুদ্ধে ৬টি, আমির হোসেন ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে ৫টি, মো. রনির বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা রয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হায়াতুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা অনিরাপদ বলব না। কিন্তু রাতে ট্রাক, পিকআপ চলাচল করবে এটা বাস্তবতা। তবে চেকপোস্টে চেক করলে খালিই পাওয়া যায়। তাছাড়া ঢাকার সব স্থানে তল্লাশি বা নজরদারি থাকে না। এসব সুযোগ নিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে।
কেএম/আরএ/