সিদ্দিকবাজারে ধসে পড়া ভবনের সামনে স্বজনদের জন্য অপেক্ষা

রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ধ্বসে পড়া ভবনের আশপাশে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। বুধবার (৮ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেলে বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ১৬টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় আরও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে ধ্বংস্তুপে এখনো কেউ কেউ আটকা থাকতে পারেন।
সকাল থেকে নিখোঁজ স্বজনের জন্য ভবনটির পাশে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. আরিফ। তিনি বলেন, আমার বন্ধু মোমিন উদ্দিন সুমন এই ভবনের নিচতলায় একটি অফিসে কাজ করত। গতকাল এই ভবনে বিস্ফোরণ হওয়ার খবর শুনেই ওকে কল করতে থাকি। মোবাইলে কল ঢুকেছে কিন্তু রিসিভ করেনি।
গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত মোবাইলে কল বেজেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ৯টার পর আর কল ঢোকেনি। উদ্ধারকারীরা ওর মোবাইলটা পেয়েছে, কিন্তু আমার বন্ধুকে এখনো পাওয়া যায়নি।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিমর্ষ হয়ে বসে আছেন আবদুল মান্নান। তার মেয়ের স্বামী মেহেদি হাসান (স্বপন) এখানে একটি দোকানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটু বাদে সেখানে এলেন স্বপনের ভাই সোহাগ। তাকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন মান্নান। সোহাগ কাল থেকে হাসপাতালে হন্যে হয়ে ভাইকে খুঁজেছেন। কিন্তু পাননি।
সোহাগ বলছিলেন, ‘উদ্ধারকাজ দ্রুত শুরু হওয়া দরকার। আমরা ভাইরে খুঁজে পেতে চাই।’
গতকাল রাতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভবনের কলাম ধসে পড়ায় ভেতরে ঢোকা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কলাম সরিয়ে ঢোকার চেষ্টা করা হলে তাতে ভবনের বাকি অংশটুকু ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে এই ঝুঁকি কমিয়ে আজ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হবে।
বুধবার সকালে ঢাকা জেলা প্রসাশনের কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস জানান, ১৬ জনের মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৪ জন। এখন পর্যন্ত চারজন নিখোঁজ রয়েছেন, দুইজন ভবনের কর্মচারী, একজন বাসচালকের সহকারী ও একজন পথচারী। নিখোঁজদের স্বজনরা মেডিকেলে এসে নাম লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। এ ছাড়া, শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ১১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সিদ্দিকবাজারের নর্থ সাউথ রোডের সাততলা ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিধ্বস্ত ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উদ্ধারকাজের জন্য ভেতরে ঢুকতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এখনো তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
কেএম/এসএন
