ঢামেকে কান্নার রোল, হন্যে হয়ে খুঁজছেন আহত-নিহতদের স্বজনরা

রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে গুলিস্তান সংলগ্ন বিআরটিসি কাউন্টারের দক্ষিণ পাশে একটি পাঁচ তলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ১৬ জনের মরদেহ এসেছে, চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক। পুরো ঢামেক হাসপাতালে জুড়ে আহত-নিহতদের স্বজনদের কান্নার রোল।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ঢামেক ঘুরে দেখা যায় আহত-নিহত স্বজনদের আহাজারি। কেউ এক কেবিন থেকে অন্য কেবিন থেকে ছুটে চলছেন দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনের খুঁজে বের করতে। অনেকে জানেনও না যে দুর্ঘটনায় স্বজন আহত হয়েছেন নাকি নিহত হয়েছেন।
এমন একজনের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা হয়। রাজধানীর ইসলামবাগের বাসিন্দা, মো. রফিক। গুলিস্তানে বিস্ফোরণের ভাগিনাকে নিহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে পেলেও, পান নি ভাগিনার স্ত্রীকে।
রফিক জানায়, তারা আজ কেনা-কাটা করতে ওই মার্কেটে গিয়েছিল। আর মার্কেটে যাওয়াই যেন তাদের কাল হয়ে দাঁড়াল। আহাজারি করা রফিকের মতো ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিহত-আহতদের আত্মীয়-স্বজনরা বোবা কান্না কাঁদছেন।
গেল দুই সপ্তাহ হলো কাতার থেকে দেশে ফিরে সুমন। শবে-বরাত উপলক্ষে মায়ের জন্য ইফতারি কিনতে এসে নিহত হয়েছেন। মেডিকেলে জরুরি বিভাগের সামনে কান্নায় বিলোপ করছে তার বোন।
নিহতের খালা জানান, সুমন বিয়ের উদ্দেশে দেশে এসেছিল। কিন্তু সব কেড়ে নিল আমার বোনের। বিলাপ করে বলছিলেন, ‘আল্লাহ তুই আমারে নিয়া যা, আমার বইন পোলাকে দিয়ে দে!’
এমন অসংখ্য লোকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি অধিকাংশের সঙ্গে। কেউ কেউ শোকে পাথর হয়ে আছেন। কারও কারও চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ।
এদিকে সিদ্দিক বাজারের নর্থ সাউথ রোডে একটি বড় ধরনের যে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা নাশকতামূলক না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
ঢামেক হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, আমাদের যারা এক্সপার্ট আছেন, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখেছেন এটা কোনো নাশকতামূলক ঘটনা না। অনেক সময় নানা কারণে বিস্ফোরণ হয়, কখনো মিথেন গ্যাস, কখনো এসির গ্যাস। এটা গ্যাসজনিত কোনো বিস্ফোরণ হতে পারে। এরপরও তদন্ত করে দেখা যাবে যে এটা নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাজাহান শিকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে এখন পর্যন্ত ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এ ছাড়া, ভবনটি থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভবনটি থেকে মোট ২২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ে একটা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। সাত তলা যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার নিচের দুটো তলা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে স্যানিটারি সামগ্রী আর গৃহস্থালী সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ছিল।
এমএমএ/
