গৃহকর্মী নাদিয়ার ময়নাতদন্ত ঢামেকে সম্পন্ন
গৃহকর্মী নাদিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ঢামেক হাসপাতালের মর্গে। মৃত নাদিয়ার বাবার দাবি তার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
গৃহকর্ত্রী মৌকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজধানীর মগবাজার এলাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় গৃহকর্মী নাদিয়ার মরদেহ। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমাকে টাকার লোভ দেখান এবং মেয়ের মরদেহ লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে রাখেন গৃহকর্তী বাঁধন।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা।এর আগে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেলী আক্তার।
তিনি জানান, নাদিয়ার মরদেহের মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া, কপালের ডান পাশে, বাম কানের পেছনে আচড়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ডান গালে থেঁতলানো ফোলা জখম। নাক এবং মুখে রক্ত মাখা। গলায় লালচে দাগ। বুক ও পেটের বিভিন্ন অংশে লালচে-কালো দাগ এবং শরীরের চামড়া উঠানোসহ আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত নাদিয়ার বাবা নাজিম উদ্দিন জানান, তাদের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর উলুয়ার চাপ গ্রামে।
গত দেড় বছর ধরে নাদিয়া শাহজাহানপুরের শান্তিবাগের শান্তি নিকেতন ৮৭/১ নম্বর বাড়ির ২/সি নম্বর ফ্ল্যাটে গৃহকর্ত্রী ফারহানা ফরহাদ বাঁধন মৌ এর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিল। তার বড় বোন নাজমাও (১৪) দীর্ঘ সাত বছর ধরে একই বাসায় কাজ করছে।
তিনি জানান, সবশেষ গত তিন মাস আগে গ্রাম থেকে ঢাকায় ওই বাসায় এসে নাদিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তখন নাদিয়া তাকে জানিয়েছিল, বিভিন্ন কারণে গৃহকর্ত্রী তাকে মারধর করেন। সে বাড়িতে চলে যাবে। তখন তার বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য গৃহকর্ত্রীর কাছে বলেন।
কিন্তু গৃহকর্ত্রী জানান, নাদিয়া তার বাসার পোষা পাখি মেরে ফেলেছে এবং কিছু জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছে। এর জরিমানা দিয়ে তারপরে তাকে নিয়ে যেতে হবে। নিরুপায় হয়ে তার বাবা নাজিম উদ্দিন তাকে রেখেই বাড়িতে চলে যান। এরপরে আর কথা হয়নি তার সঙ্গে।
রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে গৃহকর্ত্রী তাকে মোবাইলফোনে জানান, তার মেয়ে অসুস্থ। খবর শুনে ওই রাতে তিনি ট্রেনে করে ঢাকায় আসেন। এরপর ওই বাসায় গিয়ে তার মেয়ের সন্ধান করেন। তখন গৃহকর্ত্রী জানান, তার মেয়ে অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। সেজন্য তাকে ৭০ হাজার টাকায় ঢাকার সাভারে একটি বাড়ি করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে সবকিছুর আগে তিনি তার মেয়েকে দেখতে চান। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন তিনি।
কোথাও মেয়েকে দেখতে পাননি তিনি। না পেয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি ৯৯৯ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ তার মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি অভিযোগ করেন, নানা কারণে ও অকারণে তার মেয়েকে প্রচণ্ড মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী ফারহান বাঁধন। তার নির্যাতনের কারণেই মেয়েটি মারা গেছে।
তাকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর বিচার দাবি করেছেন তিনি। ঘটনাটি কাউকে না বলতে বড় মেয়েকেও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বাঁধন। সেজন্য বড় মেয়েও নাদিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই বলছে না। সোমবার রাতে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে সামনে থেকে লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা জানান, এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ মামলায় বাঁধনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এমএমএ/