পেরেকবিদ্ধ গীতাঞ্জলি হাতে বাকরুদ্ধ রবীন্দ্রনাথ! কেন?
রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র রাজু ভাস্কর্যের ঠিক পাশেই বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যেই গীতাঞ্জলির কারণে ১০০ বছর আগে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কারের সম্মাননা সেই গ্রন্থের বুকে বিঁধে আছে রক্তাক্ত পেরেক। শক্ত টেপ দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের মুখ।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে এমনই একটি ভাস্কর্যের দেখা মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে।
বাঁশ, থার্মোকল আর বইয়ের কাগজ ব্যবহার করে সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থী। অন্য অনুষদের শিক্ষার্থীরাও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে জানা গেছে এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধার প্রতিবাদে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র শিমুল কুম্ভকার। তিনি বলেন, ‘মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশ এখন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আদর্শ প্রকাশনীকে বইমেলায় স্টল না দেওয়ার উদাহরণটি তো সামনে আছেই। বইয়ের জন্য স্টল না দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বইয়ের ওপর সেন্সরশিপ নেমে এসেছে। মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতার প্রতীক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ অতুলনীয়। তাই তাকে ভাস্কর্যের বিষয় করা হয়েছে।’
কোনো বই বা লেখার ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করা উচিত নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোনো বই বা লেখা যার পড়ার ইচ্ছা, তিনি পড়বেন; যার ইচ্ছা নেই, তিনি পড়বেন না। একটি বইয়ের বিপরীতে আরও দশটি বইও লেখা যেতে পারে। চলচ্চিত্রের ওপরও সেন্সরশিপ দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদেরও লিখতে দেওয়া হচ্ছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইনে জেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাস্কর্য এসব কিছুরই প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
ভাস্কর্যটি সর্বসাধারণকে মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর সেন্সরশিপ এবং সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে অনুপ্রাণিত করবে বলে আশা প্রকাশ করে উদ্যোক্তারা জানান চলতি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই ভাস্কর্য রাজু ভাস্কর্যের পাশে থাকবে।