ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মন্ত্রী-মেয়রদের কঠোর হুঁশিয়ারি
রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের ৪০ শতাংশ বাসে যাতায়াত করে। কিন্তু বাসে বাসে অসম প্রতিযোগিতার কারণে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। বহু অনুমোদনহীন গাড়িও চলছে। তা চলতে দেওয়া যাবে না। ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মন্ত্রী-মেয়ররা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর-মতিঝিল-কাঁচপুর রুটে ঢাকা নগর পরিবহন বাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা সরকারের পক্ষ থেকে এমন কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
অনুষ্ঠানে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন মোহাম্মদপুরের সংসদ সদস্য সাদেক খান ও সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকার যানজট কমাতে দুই মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা আজ চালু হচ্ছে। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলের কাজ দ্রুত শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করবেন।
আমরা যত উন্নয়ন করি এর সুফল জনগণ না পেলে সব ম্লান হয়ে যাবে। সড়কে শৃঙ্খথলা ও পরিবহনে সমন্বয় না থাকলে জনগণ এর সুফল পাবে না।
যানজট আমাদের জন্য কষ্টের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যেভাবে হোক সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। কোনো বাধা আসলে মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হবে। কারণ, ঢাকা সিটি সব দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়ন মানায় না। আমরা কি ক্ষমতার রাজনীতি করি? দুই তিন জন চলে মটরসাইকেলে চড়ে বেড়াবে। এভাবে চলতে পারে না। কারণ, শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে উন্নয়ন দিয়ে কাজ হবে না।'
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় ৯ হাজার ২৭টি মিনিবাস চলাচল করে। মালিকদের একটি বাস আরেকটিকে ধাক্কা দেয়। বাসে বাসে তুমুল প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। এতে বাড়ছে যানজট। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। তাই বাসে ও রুটের সমন্বয় করতে রাজধানীতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাস চালু করা হলো। নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো। পোশাক ও পরিচয়পত্র থাকতে হবে ড্রাইভার ও হেলপারদের। এ রুটে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হচ্ছে ২.১৫ টাকা। মোহাম্মদপু-মতিঝিল থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে এ বাস। সবার সহযোগিতা দরকার। তবেই স্বপ্ন হবে সত্যি।'
মেয়র তাপস বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ভেদ করেই সার্থক হলো আজ। কারণ যানজট কমাতে একই রংয়ের বাস চালু করা সম্ভব হলো। সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে নব যাত্রা সম্ভব হয়েছে। রাজধানীর যানজট কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন, স্বপ্ন দেখেছেন। তারই অংশ বিশেষ রাজউকসহ সবার সহযোগিতায় ২০২৩ সালে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হবে।
চালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোনো প্রতিযোগিতা, ঠেলাঠেলি, চাপাচাপি করা যাবে না। যাত্রীদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট বাসস্টান্ড থেকে যাত্রী উঠাতে হবে। এর বাইরে সড়কে কোনো যাত্রী উঠানো যাবে না।
তাপস বলেন, ৫০টি বাস দিয়ে শূচনা করা হলো আজ। জানুয়ারিতে সভা করে প্রয়োজন আমলে নিয়ে আরও বাস বাড়ানো হবে। শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০২৩ সালে পুরো ঢাকা শহরে ৯টি ক্লাস্টারে এভাবে বাস চলবে। ঢাকার বাইরেও আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল করা হবে।
পুলিশদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনুমোদনহীন কোনো বাস আর ঢাকায় চলতে পারবে না। যার যে রুট তাকে সেপথেই চলতে হবে। এর ব্যত্যয় হতে দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে তা দেখতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ত্রুটি-বির্চতি থাকবে। তা দেখিয়ে দিবেন। তা সংশোধন করা হবে। তবে যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সাদেক খান বলেন, দেখতে দেখতে ৫০ বছর চলে গেছে। অনেক কাজ হয়েছে। তারপরও মোম্মদপুরে যানজট ভয়াবহ ধারণ করেছে। বিআরটিসি বাস স্টান্ড সরাতে হবে। মোহাম্মদপুরকে যানজটমুক্ত করতে হবে।
জেডএ/এমএমএ/