'সকল সংস্থার সদস্যদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে'
মাদক নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থার সদস্যদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু। মঙ্গলবার (২৮ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন মো. শামসুল হক টুকু।
তিনি বলেছেন, ডোপ টেস্ট কার্যক্রমকে সফল করতে এরই মধ্যে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। দ্রুতই নতুন কর্তৃপক্ষের অধীনে পুলিশের পাশাপাশি সরকারি চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সকল ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে 'মাদক প্রতিরোধে ডোপ টেস্টের ভূমিকা' শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা। সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, এস এম শাহজাদা ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, নৌ সড়ক ও বেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, ডিআরইউ'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ডিইউজে'র ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, ফেইথ ইন একশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য প্রমুখ। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন একাত্তর টেলিভিশনের যুগ্ম-প্রধান বার্তা সম্পাদক পলাশ আহসান।
সভায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, পুলিশের ডোপ টেস্ট কার্যক্রম চলছে। গাড়ি চালকদের ডোপ টেস্ট শুরু হয়েছে। চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট শুরুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে হবে। এতে মাদকের চাহিদা কমবে। ফলে দেশে মাদকের প্রবেশও কমবে। ডোপ টেস্ট কার্যক্রম সফল ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় অনেক অনুমোদনহীন কারখানার কারণে বাংলাদেশে মাদকের সহজলভ্যতা দেখা দিয়েছে। তারপরও মাদক নির্মূলে সরকার বসে নেই। আমরা চেষ্টা করছি, কিভাবে মাদকের থাবা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা যায়। তিনি মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলানোর আহ্বান জানান।
সকলে সচেতন হলে মাদকমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, শতভাগ সফল না হলেও মাদক প্রতিরোধে সকল ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট চালু করতে হবে। তবে এ বিষয়ে সচেতনতা বড় বিষয়। তাই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচারণা কর্মসূচি নিতে হবে।
জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে মাদকাসক্তদের অযোগ্য ঘোষণার আহ্বান জানান সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার। তিনি শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকলকে ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে স্কাস চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, সারা দেশে মাদক পাচার ও বেচাকেনার ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবসার কৌশল বদলে মাদক কারকারীরা এখন নারী ও শিশুকে ব্যবহার করছে। যা খুবই দুংখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। তাই সমাজ থেকে মাদক নিমূল করতে মাদকের গডফাদার আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত মানুষ রয়েছে। প্রতিবছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে দুইশো মা-বাবা খুন হয়েছেন। অন্যান্য অপরাধের মূলেও রয়েছে এই মাদক।
প্রবন্ধে আরো বলা হয়, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এই হিসেবে একজন মদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকার মাদকের জন্য ব্যয় করে। দেশে ২৫ লাখ মাদকাসক্ত ধরা হলে তারা বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। আর পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই অবস্থা পরিবর্তনে বিদ্যমান মাদক আইনকে যুগোপযোগী করার পাশাপাশি মাদক বিস্তার রোধে সকল ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট কার্যকর করার বিকল্প নেই।
কেএম/এএজেড