হাতিরঝিলকে জাতীয় সম্পত্তি ঘোষণা করা রায় স্থগিত চায় রাজউক
রাজধানীর হাতিরঝিলকে জনগণের সম্পত্তি বা জাতীয় সম্পত্তি ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
এই আবেদনের উপর শুনানির জন্য আবেদনটি আগামি ২৭ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি।
রবিবার (১৯ জুন) চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৮ সালে রাজধানীর হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের লেআউট প্ল্যানের বাইরে অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ ওই রায় ঘোষণা করে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ রূপ গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক লিভ টু আপিলের আবেদন করে। এ ছাড়া স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনও করে রাজউক, চেম্বার আদালতে রবিবার এই আবেদন শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
আদালত থেকে বের হওয়ার পর মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমকে বলেন, চেম্বার আদালত স্থগিতাদেশ না দিয়ে আবেদনটি ২৭ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন। এ অবস্থায় হাইকোর্টের রায় বহাল থাকছে।
প্রসঙ্গত, হাইকোর্ট রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি ও এর সৌন্দর্যকে মহামূল্যবান জাতীয় সম্পত্তি উল্লেখ করে রায় দেন। রায়ে এর সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কয়েক দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা পরামর্শও দিয়েছেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়, হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ ও নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন ও তুরাগ নদের রায় অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ।
এতে আরও বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ও এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
রাজধানীর হাতিরঝিল–বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে রায়ে। তা ছাড়া জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের শৌচাগার স্থাপন করতে বলা হয়েছে রায়ে।
রায়ে দেয়া পরামর্শের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা; পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা; পানির জন্য ক্ষতিকর এমন যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা; হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা; হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।
রায়ে বলা হয়, প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই।
এমএ/এমএমএ/