রাজধানীতে যানজটের কবলে পড়ে অস্বস্তিতে মানুষ
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজট। আর এই যানজটে পড়ে সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। চলাচলরতদের অভিযোগ, রাজধানীতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হলেই যানজটে শিকার হতে হয়। তাদের দাবি, যানজটের কারণে এক এলাকায় গেলে অন্য এলাকার কাজ করা যায় না। যার কারণে দৈনন্দিন কাজের জন্য বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, হঠাৎ কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে যানজট বেড়ে গেছে। তাদের দাবি, অনেক রাস্তায় ওয়াসা এবং সিটি কর্পোরেশনের কাজ চলছে যার কারণে রাজধানীতে যানজটের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
সোমবার (১৩ জুন) সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত রাজধনীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব যানজটের চিত্র ছিলো চোখে পড়ার মতো। তবে সবচেয়ে বেশি যানজট দেখা গেছে রাজধানীর কাওরান বাজার, বাংলামটর, শাহবাগ মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, কাকরাইল,মালিবাগ, বাড্ডা, মিরপুরসহ এসব এলাকা। চলাচলরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বলছেন, একদিকে গরম, অন্যদিকে ব্যাপক যানজট। সব মিলিয়ে নাকাল অবস্থা আমাদের। দিন যত যাচ্ছে, যানজটের পরিমাণ ততই বাড়ছে।
ট্রাফিক বলছে, যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি কিন্তু রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে অতিরিক্ত যানজট তৈরি হচ্ছে। কাওরানবাজারে কথা হয় মিরপুরের পথযাত্রী লাবনী আক্তারের সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, রাস্তায় কোন ভাবে চলাচল করা যাচ্ছেনা প্রতিদিন যানজটে পড়তে হচ্ছে।
সাইন্সল্যাব মোড়ে কথা হয় সদরঘাটের যাত্রী এডভোকেট জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এমনিতে আমি অসুস্থ এবং যানজটে পড়ে আরও অস্বস্তিতে ভুগছি। মনে হচ্ছে এই গরমে মারা যাবো। বাংলামটর মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে কথা হয় মিরপুরের পথযাত্রী সাদাত হোসেনের সঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের যানজট কখনো যাবেনা। কষ্ট আর ভোগান্তি নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
উত্তরার যাত্রী মামুন মিয়া বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। ঢাকা শহরের যানজট কখনও সমাধান হবে না। ঢাকাকে পরিত্যক্ত শহর হিসেবে সরকারের ঘোষণা করা দরকার।
এদিকে মহাখালী এলাকায় কথা হয় বৈশাখী পরিবহনের বাসচালক জুলফিকার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদিনে যানজট আর যানজট। এত যানজট ভালো লাগেনা। যানজটের কারণে আমাদের আয় রোজগার কম হচ্ছে। গুলশান মোড়ে কথা হয় স্কুটি আরোহী আকলিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায়ই আমাদের যানজটে পড়ে কষ্ট পেতে হয়। এসব সমাধান হবে কবে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, রাস্তায় প্রতিদিনের যানজট হচ্ছে আর যানজট নিরসনে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ বিশেষভাবে দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, যে সমস্ত এলাকায় যানজট বেশি হচ্ছে বা হয় সেখানে আমাদের ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে কিন্তু এর পরও যানজট যাচ্ছে না।
আসলে ঢাকায় প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকার অনেক রাস্তায় সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা খোঁড়াখুঁড়ি করে রেখে কাজ করছে এবং মেট্রোরেলের কাজও চলমান রয়েছে এজন্য একটু বেশি যানজট মনে হচ্ছে। জানতে চাইলে গুলশান ট্রাফিক মোড়ে ডিউটিরত সার্জেন্ট মূসা বলেন, আমি দুপুর থেকে ডিউটি শুরু করেছি। আজ রাস্তায় যানজট আর যানজট। চাঙ্খারপোল মোড়ে ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্ট খায়রুল বলেন, দুপুরের পর থেকে একটানা যানজট নিরসনের কাজ করছি। মাঝে মাঝে একটু রেস্ট নিতে পারি কিন্তু আজ পারছি না। আজ রাস্তায় দাড়িয়েই কাজ করছি।
হাইকোর্ট মোড়ে ডিউটিরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ইমন হোসেন বলেন, প্রতিদিন কম বেশি রাস্তায় যানজট হচ্ছে। আমরা তো সরকারী দায়িত্ব পালন করছি কিন্তু যানজট নিরসনের দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, একদিকে রাস্তায় যানজট থাকে অন্যদিকে বিভিন্ন গাড়ি ও মটর সাইকেল উল্টাদিক দিয়ে আসে এবং যনজট তৈরি করে। যানজট নিরসনে আপনার পরামর্শ কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার মতে ঢাকা শহর হলো অনেক পুরাতন শহর। এই শহরকে নতুন রুপে সাজাতে হবে অথবা এর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কেএম/এএজেড