গরীবের ডা. বুলবুল হত্যার মূলহোতা গ্রেপ্তার না হওয়ায় শঙ্কায় পরিবার
গরীবের ডা. খ্যাত বুলবুল আহমেদ ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার দেড়মাস পেরিয়ে গেলেও মূলহোতা ও ছিনতাইকারী রিপন এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, খুব শীঘ্রই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। বুলবুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে রিমান্ডে নিলে বেরিয়ে আসে রিপনের নাম। ছিনতাই চক্রটির প্রধান রিপনই ডা. বুলবুলকে ছুরি মারেন বলে জানায় তারা। স্বামীর প্রধান হত্যাকারী রিপন এখনো ধরা না পড়ায় এই মামলার তদন্ত ও বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানান বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার।
গত ২৭ মার্চ ভোরে ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়া মেট্রোরেলের সাত নম্বর স্টেশনের নিচে ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে ডা. বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। হসপিটালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান বুলবুল। ওই দিনই নিহতের স্ত্রী শাম্মী আক্তার বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগ।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বুলবুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজন ছিনতাইকারী জড়িত বলে শনাক্ত হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার মূলহোতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। জানা গেছে, বুলবুল হত্যার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি ডিবি। ডিবির মিরপুর বিভাগের ডিসি মানস কুমার পোদ্দার বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
এই মামলায় গত ৩০ মার্চ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের প্রধান রিপনের নাম বেরিয়ে আসে বলে জানান মানস কুমার পোদ্দার। তিনি বলেন, এই ছিনতাই চক্রের প্রধান রিপনই চিকিৎসক বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে। মূলহোতা রিপন ধরা না পড়ায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ডা. বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার ঢাকা প্রকাশকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের এত দিন পার হয়ে গেলেও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এখন সুষ্ঠু বিচার নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।’ তবে ডিবির তদন্তের ওপর আস্থা আছে বলে জানান তিনি।
প্রথম থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুলবুল হত্যার ঘটনাকে ছিনতাইকারীর কাজ বলে ধারণা করে আসছে। তবে বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার অভিযোগ করে আসছেন, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার স্বামী যে ঠিকাদারির কাজ করেন তার সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে। ঠিকাদারির কাজেই ২৭ মার্চ ভোরে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বুলবুল।
গ্রেপ্তার চারজনের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য থেকে এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাইকারীরা ওই দিন ভোরে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে অবস্থান নেয়। বুলবুলের রিকশা থামিয়ে তাকে সবকিছু দিতে বলে তারা। এতে বাগবিতণ্ডা হলে ওই চিকিৎসককে ছুরি মারে রিপন। পরে মানুষজন চলে আসায় সটকে পড়ে তারা।
খুব শিঘ্রই অন্য আসামিকে গ্রেপ্তার করে মামালার তদন্তকাজ শেষ করতে পারবেন বলে জানান ডিসি মানস কুমার পোদ্দার। গ্রেপ্তার চারজন রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তারা জেলহাজতে রয়েছেন।
উত্তরবঙ্গের রংপুর শহরের কোতোয়ালি ভগিবালাপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ ও বুলবুলি সামাদ দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ২০০৮ সালে দিনাজপুরের মেয়ে শাম্মী আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের কোল জুড়ে আসে মেয়ে আয়ন ও ছেলে সামী। পরিবার নিয়ে পশ্চিম শেওড়াপাড়া আনন্দবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন ডা. বুলবুল। ডা. বুলবুলকে হারিয়ে তার পরিবার এখন শোকে কাতর। গত ঈদে কোনো আনন্দ ছিল না শাম্মী ও বুলবুলের বাড়িতে। ২০০৮ সালে বিয়ে হওয়ার পর থেকে কোনো ঈদ একা করেননি শাম্মী। এবার তাই করতে হলো তাকে।
শাম্মী আক্তার বলেন, ‘ওর (বুলবুল) একটা ভালো অভ্যাস ছিল সে তার সব ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের সাথে ঈদ করতে রংপুর শহরের কোতোয়ালি ভগিবালাপাড়া গ্রামের বাড়িতে আসত। এই সময় গ্রামের সবার খোঁজখবর নিতো। এছাড়া গ্রামে ঈদের ছুটিতে এসে অনেকেরই ফ্রি চিকিৎসা দিতো। এবার গ্রামে ছিল শোকের আবহ।’
উল্লেখ্য, ডা. বুলবুল গত ২৭ মার্চ ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার জন্য রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন মিরপুর বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু কাজীপাড়া মেট্রোরেলের সাত নম্বর স্টেশনের নিচে ২৭৮ নম্বর পিলারের কাছে পৌঁছালে তার গতিরোধ করে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় তারা।
কেএম/এএজেড