ডেমরার কোনাপাড়া বাজার
ভয়ংকর ‘ভিক্ষুক’ সিন্ডিকেট সেজে ছিনতাই, নির্বিকার আইনশৃংখলাবাহিনী!
রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ি থানাধীন কোনাপাড়া বাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে ভয়ংকর ‘ভিক্ষুক’ সিন্ডিকেট সেজে ছিনতাইয়ের চক্রর। প্রতিনিয়ত এই চক্রের হাতে নারী পুরুষ সদস্যরা তাদের মূল্যবান মোবাইল, দোকান থেকে কেনা পন্য ও নগদ টাকা খোয়াচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের হাতে সাধারণ মানুষ সর্বস্ব খোয়ালেও স্থানীয় পুলিশ ফাড়িসহ আইন শৃংখলাবাহিনীরা সদস্যরা অনেকটাই নির্বিকার রয়েছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
এলাকাবাসীরা বলছেন, এই সিন্ডিকেটের মধ্যে পঙ্গু, ভিক্ষুক, নারীসহ রয়েছে বেশকিছু মাদকসেবী। তাদের কর্মকান্ডে বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত থাকতে হয় অজানা আতংকের মধ্যে। তাদের দাবী, দ্রুত এই চক্রকে চিহিৃত করে লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা। নতুবা এই সিন্ডিকেটের উৎপাতে অনেকেই নি:স্ব হয়ে পড়বে। ঘটতে পারে আরো বড় ধরনের ঘটনাও।
সর্বশেষ শুক্রবার (২০ মে) এই ‘ভিক্ষুক’ ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে মোবাইল, নগদটাকা ও বাসার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র খুইয়েছেন নয়া দিগন্তের সাংবাদিক মনির হোসেনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার নামের এক গৃহিনী। তিনি এব্যাপারে ডেমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। যার নম্বর ৮৬৬, ঘটনার পর থানা পুলিশ স্থানীয় কোনাপাড়া ফাড়িকে ওয়্যারলেসে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
শুধু ওই নারীই নন, এরআগেও একইভাবে অনেকেই বাজার করতে এসে খুইয়েছেন দোকান থেকে ক্রয় করা মালামাল, মোবাইল ও নগদ টাকা। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ডেমরা থানাধীন মাতুয়াইল মুসলিমনগর এলাকার (রফিকুল ইসলাম স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন) স্বপ্নচুড়া ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া মনির হোসেনের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মাকে সাথে নিয়ে কোনাপাড়ার কাঁচাবাজারে যান। এই বাজারের পশ্চিম পাশটি হচ্ছে যাত্রাবাড়ি থানা এলাকার আওতাধীন। আর পূর্বপাশ হচ্ছে ডেমরা থানার অধীনে।
পূর্ব পাশের মিনিষ্টার ফ্রিজের শো রুমের দক্ষিণ পাশ থেকে তারা কাচাবাজার এবং মাছ কেনেন। এসময় সেখানে বসে থাকা এক পা কাটা ভিক্ষুককে দেখে মৌসুমী আক্তার কিছু সাহায্য করার লক্ষ্য ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেন। এরপর তিনি সেখান থেকে কিছু সময় পর রাস্তার পশ্চিম পাশের মজিবর পান স্টোরের সামনে থাকা একটি আমের দোকানে গিয়ে আম কেনার জন্য দরদাম করতে থাকেন।
এরপরই তিনি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখেন মোবাইল ও নগদ টাকাসহ থাকা ভ্যানিটি ব্যাগটি নেই। তিনি ঘটনাটি আশপাশের লোকজনকে জানালে তারা এব্যাপারে কেউ কিছু দেখেননি বলে জানান। এরপর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পরামর্শে পরবর্তীতে তিনি তার স্বামীকে সাথে নিয়ে সরাসরি চলে যান ডেমরা থানায়।
ডেমরা থানার ডিউটি অফিসার সাদ্দাম অভিযোগ শুনে তাদেরকে জানান, যেহেতু মোবাইল এবং নগদ টাকা খোয়া গেছে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে, নতুবা পরে আসতে হবে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ঘন্টাখানেক থানায় অপেক্ষা করার পর ওয়্যারলেস অপারেটর রফিক এসে জানান, শুধু মোবাইল খোয়া গেছে বলা হলে জিডি করা যাবে। টাকার কথা উল্লেখ করা যাবে না। আর যদি টাকার কথা উল্লেখ করতে হয় তাহলে মামলা করতে হবে।
এরপর ওই দম্পত্তি মামলা না করে আপাতত জিডি করে বাড়িতে ফিরে যান। মোবাইল ও টাকা খোয়ানো ওই নারী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি আমার মাসহ বাজার করার সময় একটি পা নেই ভিক্ষুককে দেখে মায়া লাগে। আমি তাকে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিয়ে রাস্তার ওপারে আমের দোকানে যাই। এরপরই দেখতে পাই আমার ব্যাগটি নেই। এখন কোথা থেকে খোয়া গেছে তা বলতে পারছি না।
পরবর্তীতে আমি আমার স্বামীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ওই ভিক্ষুককে সেখানে আর খুজেও পাইনি। আমার ধারনা এ চক্রের সাথে ওই ভিক্ষুকেরও হাত থাকতে পারে? তবে আমার ব্যাগ যখন খোয়া যায় তার আগে এক নারী আমার গায়ের উপর এসে হালকা ধাক্কা দেয়। তখন আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। মোবাইলটি আমি ১৮ হাজার ৯০০ টাকায় কিনেছিলাম একবছর আগে। আর বাজার করার জন্য নগদ ২৫০০-৩০০০ হাজারের মতো টাকা ছিলো।
আম দোকানীসহ অন্যরা বিষয়টি জানার পর এ প্রতিবেদককে বলেন, এই বাজারে কিন্তু অনেক বড় বড় ছিনতাই চক্রের সদস্যরা আছে। প্রতিদিন কারো না কারো মোবাইল, টাকা ছিনতাই হচ্ছে। একদিন আগেই পাশের ব্যাংক থেকে এক লোক ৭ লাখ টাকা নিয়ে বের হওয়ার পরই সেটি খোয়া যায়। পরে আমার দোকানের সামনে দাড়ানো লোকটিকে দেখছেন সে গিয়ে ওই ছিনতাকারীকে ধরে ফেলে।
মজিবর পান স্টোরের মালিক জানান, তার দোকানে যে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে সেটি দিয়ে শুধু তার দোকানের সামনে পর্যন্তই দেখা যায়। দুরেরটা দেখা যায় না। ওই দোকানের সামনে দাড়ানো একজন পুরুষ ব্যক্তি জানান, গতকালই আমার ৩০ হাজার টাকার একটি মোবাইল এই বাজার থেকে মুহুর্তে নিয়ে গেছে। ডেমরা থানায় গিয়ে আমি একটি জিডি করেছি। পুলিশ বলেছে ট্রাকিং করে দেখবে।
অপর একজন নারী সদস্য বলেন, বাজারের পেছনে দিনে রাতে গাঞ্জুটিদের আসর বসে প্রতিদিন। তাদেরকে ফাড়ির পুলিশরাও চেনে? কিন্তু তাদের কিচ্ছু বলে না। এরজন্য আমরাও আর কিছু বলি না। তবে সারাক্ষণ ছিনতাইকারী ও চোরদের নিয়ে আতংকে থাকি। কারণ প্রায় কাস্টমার দোকান থেকে মালামাল কিনে রাখার পর গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় গাড়ি থেকেও মালপত্র গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ছিনতাইকারী ও চোর সিন্ডিকেট গ্রুপে নারী-পুরুষ সদস্য ছাড়াও মাদকসেবি এবং ভিক্ষুক রয়েছে বলে তারা জানান।
এএজেড