কিউআর কোড দেখিয়ে চাকরির কন্টাকের টাকা নিয়ে প্রতারণা অবশেষে ধরা!
চাকরির ভুয়া প্রশ্ন ও নিয়োগপত্র প্রদান চক্রের দুই জন গ্রেপ্তার
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ
বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির দেবার নাম করে ভুয়া প্রশ্নপত্র ও নিয়োগপত্র প্রদানের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি) এর ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোঃ মোশারফ হোসেন ও মোঃ জিয়া উদ্দিন। সোমবার (১৬ মে) টায় ঢাকা মহানগরীর দারুস সালাম থানার আনন্দ নগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার ডিবি সাইবারের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন, ৭ টি সিম কার্ড, বিভিন্ন চাকরি ভুয়া প্রশ্নপত্র ও ভুয়া প্রবেশপত্র এবং ভুয়া নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুরে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ।
তারেক বিন রশিদ বলেন, ভুক্তভোগী একজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি সাইবারের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এক পর্যায়ে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় দারুস সালামের আনন্দনগর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে সাইবার কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন পদের চাকরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো তাদের সংগ্রহে রাখে। পরবর্তীতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সাধারণ চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে নিজেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। প্রথমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীর জীবন বৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি ও অন্যান্য সকল ডকুমেন্ট ইত্যাদি সংগ্রহ করে।
পরে একটি ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে প্রার্থীর ইমেইলে প্রেরণ করে। এরপর বিকাশ অথবা রকেটের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছেন বলে প্রার্থীকে জানাই। তিনি বলেন, কিছুদিন পরে ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ড এর মাধ্যমে অপর এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুনরায় কল করে মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ কিছু টাকা বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে দিতে বলে। ওই টাকা পাওয়ার পর প্রতারক চক্ররা একটি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে।
তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য চাকুরী প্রত্যাশীদের “QR Code Generator” সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম ঠিকানা সম্বলিত একটি “QR Code” তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি স্থাপন করে। এবং প্রার্থীকে বলা হয় যে, “QR Code Scanner” দিয়ে আপনার নিয়োগপত্রটি সঠিক কি-না যাচাই করুন। প্রার্থী যখন তার মোবাইলের “QR Code Scanner” দিয়ে চেক করে তখন সেখানে নিজের তথ্য দেখায় এবং প্রার্থী চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে এই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এর মধ্যে তারা ব্যবহৃত ফোনগুলো বন্ধ করে ফেলে।
তারেক বিন রশিদ আরো বলেন, চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্ঠা অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারকৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কোনোভাবেই আগে পাওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে কোন ধরনের অবৈধ বা অনৈতিক পন্থায় তা সংগ্রহের চেষ্টা না করে কেউ প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রস্তাব দিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জানানোর পরামর্শ দেন সাইবার এই পুলিশ কর্মকর্তা।
কেএম/এএজেড