নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার আলামত পেলেই কাজ বন্ধ: ডিএসসিসি মেয়র
ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার বিস্তার রোধে সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সভায় বেশ কিছু মতামত উঠে এসেছে। সোমবার (১৬ মে) ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরবৃন্দ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওয়াসা, ডেসাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনদের সঙ্গে এই মতবিনিময় করেন মেয়র তাপস।
মতবিনিময় সভায় রিহ্যাবের প্রতিনিধির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে যদি পানি জমে থাকা বা এডিস মশার বংশ বিস্তার হতে পারে এমন আলামত পাই তবে এবার জরিমানা নয় নির্মাণ কাজই বন্ধ করে দেওয়া হবে। এসময় রিহ্যাবের প্রতিনিধি বলেন, আপনাদের নির্দেশনা অনুযায়ীই আমরা চলব। আমরা নিয়মিত ওষুধ ছিটাচ্ছি। আর কি কি করত হবে জানাবেন।
শুধু মশক নিধনের জন্যই ডিএসসিসির ১ হাজার ৫০ জন সার্বক্ষণিক কর্মী রয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত কীটনাশক মজুদ আছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মেয়রের কাছে আর্জি জানান মসজিদে জনসচেনতামূলক লিফলেট বিতরণের। জবাবে মেয়র বলেন, এ সম্পর্কিত নির্দেশনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধি মেয়রকে বলেন, রেলের স্থাপনাগুলোর দিকে যাতে সিটি করপোরেশন এক যত্নশীল হয়। এসব স্থাপনা পুরনো এবং এডিস মশার বংশ বিস্তারে সহায়ক। জবাবে মেয়র তাপস বলেন, আপনি যেমন বিষয়গুলোর প্রতি যত্নশীল আপনার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ততটাই উদাসীন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জমি চেয়েছিলাম। আপনার কর্তৃপক্ষ সেই জমি দিচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিনিধি বলেন, আমাদের নিজস্ব ফগার মেশিন আছে। মশক নিধনকাজে সার্বক্ষণিক ২৫ জন কর্মী আছে। আমরা নিয়মিত এ ব্যপারে কাজ করছি। জবাবে মেয়র ডিএমপির প্রতিনিধিকে কয়েকটি ছবি দেখিয়ে বলেন, থানায় জব্দ করা গাড়িগুলো যেভাবে রাখা হয় তাতে পানি জমে থাকে। এগুলো এডিসের বংশ বিস্তারে সহায়ক। এব্যপারে থানাগুলোতে পদক্ষেপ নেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এছাড়া পুলিশ লাইনগুলোর নর্দমার পানি প্রবাহ ঠিক রাখুন। আর আপনাদের ছাদবাগান করার দরকার নাই। আপনারা পরিচর্যা করতে পারবেন না। শুধু শুধু এগুলো মৃত্যুর কারণে হয়ে দাঁড়াবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি বলেন, স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে বর্ষার সময় সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহযোগিতা করবে।
এ অবস্থায় মেয়র বলেন, গতবারও আপনারা অনেক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু এবার আরেকটু বেশি সহযোগিতা করতে হবে। গতবার আপনারা আক্রান্তদের তালিকা দিয়েছেন। সেখানে অনেকের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার ছিল না। এজন্য আমাদের কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। এবার তালিকায় নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিয়ে দিবেন। এবং দুই সিটি করপেরেশনের তালিকা আলাদা করে দিবেন যাতে আমরা এডিস মশা নির্মূলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি। মেয়র তাপস বলেন, স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে একদিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে। দেখা যাবে যে এসব শিক্ষার্থী বাসায় তাদের বাবা-মাকেও এব্যপারে সচেতন করবে।
বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, কাউন্সিলরদের প্রতি অনুরোধ প্রতিটি মহল্লায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি করুন। ওয়াসার মিটারের পাত্রে যাতে পানি না জমে সেজন্য ওয়াসাকেই খেয়াল রাখতে হবে। অনেক বাসায় পানি থাকে না। তাই তাদের বাধ্য হয়ে পানি ধরে রাখতে হয়। এতে এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটে। তাই ওয়াসাকে পানির সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।
নির্মাণাধীন ভবন নিয়ে কবিরুল বাশার বলেন, একটা ভবন ১০/১২ বছর ধরে চলে। এটা তো ঠিক না। আমার মনে হয় কতদিনে ভবন নির্মাণ করতে হবে সেটি রাজউককে বেঁধে দিতে হবে। মতবিনিময় সভায় বিজিবি, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গণপূর্ত অধিদপ্তর, ১৩, ৩৮ এবং ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বক্তব্য দেন।
আরইউ/এএজেড