বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার: ঈদে প্রতিদিন নয়টি করে প্রদর্শনী
ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন রাজধানীর বিজয় সরণিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে। বিশেষ করে শিশুদের বিনোদনের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে নিতে পারেন এই উদ্যোগ।
ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর চাপ বেশি থাকে, চাপ সামলাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের ডেপুটি ডিরেক্টর (প্রশাসন ও অর্থ) মো. সফিকুল ইসলাম সরকার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নভোথিয়েটারে সাধারণত প্রতিদিন ছয়টি প্রদর্শনী হয়। তবে দর্শনার্থীর চাপ বিবেচনায় আমরা প্রতিদিন সাতটি/আটটি বা এমনকি নয়টি প্রদর্শনীও করতে পারি।
নভোথিয়েটারের আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখানে ১০০ টাকার টিকিটে প্ল্যানেটেরিয়াম শো, ৫০ টাকার টিকিটে ডিজিটাল ও সায়েন্টিফিক এক্সিবিটস এবং ৫০ টাকার অন্য টিকিটে ফাইভ ডি মুভি থিয়েটার দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা।
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে মহাকাশ বিষয়ক ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রদর্শনীগুলো। প্রতিটি প্লানেট শো আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরী করা হয়েছে। দর্শনার্থী প্রতিটি প্ল্যানেটেরিয়াম শোতে পাবেন বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কারের তথ্য।
প্রদর্শনীগুলো হচ্ছে হলো
মিশন টু ব্লাক হোল: মহাবিশ্বের সর্বাধিক বিস্ময়কর স্থান ব্লাক হোল, যেখান থেকে আলো পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারে না। ক্রোনুজ ও ডারউইন নামক দুটি মহাকাশযানের মাধ্যমে ব্লাক হোল এবং গ্রিজার-৫৮১ নক্ষত্রের ভারচ্যুয়াল ভ্রমণের অনুভূতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্লাক হোল সিনেমা। এই সায়েন্স ফিকশন ফিল্মে পাওয়া যাবে ব্লাক হোল সম্পর্কিত এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব তথ্য ও মানুষের বসবাস উপযোগী গ্রহ সন্ধানে বিজ্ঞানীদের নতুন আবিষ্কার।
গুড নাইট গল্ডিলকস: পৃথিবী এ যাবত আবিষ্কৃত একমাত্র প্রাণের বসবাসের উপযোগী গ্রহ অর্থ্যাৎ গল্ডিলকস অঞ্চল। মহাবিশ্বে কতটি নক্ষত্রের গল্ডিলকস অঞ্চলে গ্রহ আছে এবং সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা এবং বসবাস উপযোগী গ্রহ সন্ধানে নাসার টেলিস্কোপের অভিযান নিয়ে নির্মিত ফিল্ম গুড নাইট গল্ডিলকস।
জার্নি টু দ্যা স্টার: মহাকাশে তারাদের জন্ম, মৃত্যু এবং আবর্তনকালের বিস্তারিত বর্ণনাসহ আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়েতে সূর্যের অবস্থান ও সূর্যকে কেন্দ্র করে নয়টি গ্রহের আবর্তনের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে এই ফিল্মে।
ডন অফ দ্য স্পেস এজ: মানব জাতীয় মহাকাশের অপার রহস্য আবিষ্কারের নেশা প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা থেকে জানা যায়। ১৯৫৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুতনিক নামক কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপনের পর থেকে মহাকাশ যুগের যাত্রা শুরু। নাসার সফল চন্দ্র অভিযান থেকে শুরু করে বুধ, শুক্র, মঙ্গল গ্রহ ও অন্য সব সফল অভিযানসহ মহাকাশ স্পেস স্টেশন স্থাপনের নানা তথ্য নিয়ে নির্মিত ফিল্ম ডন অফ দ্যা স্পেস এজ।
সিম্ফনি অফ দ্যা স্টারি স্কাই: মহাকাশের বিষয়ে প্রাচীন ভারতীয় ও মিশরীয়দের ধারণাসহ সূর্যের ৯টি গ্রহের বিস্তারিত বর্ণনা এবং ভয়েজার – ১ ও ভয়েজার – ২ এর অভিযানের সাহায্য নিয়ে নির্মিত মহাকাশের বিশদ তথ্য নির্ভর ফিল্ম সিম্ফনি অফ দ্যা স্টারি স্কাই।
প্রতিটি প্রদর্শনীর শুরুতে থাকছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক জীবন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর গৌরবোজ্জল ভূমিকার উপর নির্মিত ৩০ মিনিটের একটি ডিজিটাল ফিল্ম।
ডিজিটাল ও সায়েন্টিফিক এক্সিবিটস গ্যালারী প্রসঙ্গে মো. সফিকুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, এখানে ৩০টি ডিজিটাল ও সায়েন্টিফিক এক্সিবিটস সংযোজিত হয়েছে। এগুলোর সাহায্যে বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞান লাভ করতে পারবে। এসব অত্যাধুনিক এক্সিবিটস বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার প্রতীক। এর দ্বারা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের চমকপ্রদ এবং আশ্চর্যজনক বিষয়গুলোকে অবলোকন ও অনুভব করতে পারবে এবং তাদেরকে বিজ্ঞান মনস্ক হতে সহায়তা করবে। এছাড়াও রয়েছে সৌর জগতের গ্রহসমূহের মডেল, মহাকাশ বিষয়ক তথ্যচিত্র, সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের মডেল ইত্যাদি।
ফাইভ-ডি মুভি থিয়েটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নতুন সংযোজিত ফাইভ-ডি মুভি থিয়েটারে চোখে বিশেষ ধরনের চশমা দিয়ে দেখা যাবে আকর্ষণীয় প্রদর্শনী যাতে রয়েছে Bubble, Air, Water, Leg tickler, Special lighting, Chair movement, Smoke ইত্যাদির দারুণ ইফেক্ট।
সাপ্তাহিক ছুটি বুধবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন এটি খোলা থাকে। এরমধ্যে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং অন্যান্য সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে নভোথিয়েটার।
এমএ/এমএমএ/