অর্থ সহায়তা করলেই কি একজন মানুষের শূন্যতা পূরণ হয়: মুরসালিনের স্ত্রী
নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত দোকান কর্মচারী মোরসালিনের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। এ ঈদে কেনাকাটা করা এবং দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল মোরসালিনের স্ত্রী অর্ণি আক্তার মিতুর। কিন্তু কেনাকাটা ও ঘুরতে যাওয়া কোনোটাই হলো না আর। পুরো পরিবারের ঈদের দিন কেটেছে বিষাদময়।
নিহত মোরসালিনের স্ত্রী মিতু বলেন, ‘অর্থ সহায়তা করলেই কি একজন মানুষের শূন্যতা পূরণ হয়?’
বুধবার (৪ মে) ঈদের দ্বিতীয় দিন মোরসালিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের এ প্রতিবেদকের।
মোরসালিনের পরিবারের লোকজন জানায়, ঈদের কেনাকাটা, ঈদের পর ঘুরতে যাওয়া, আত্মীয়দের বাসায় দাওয়াতে যাওয়া- কিছুই হয়নি তাদের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অকাল চলে যাওয়া হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। এখন তাদের পরিবারের চিন্তা, শিশুসন্তান নিয়ে কীভাবে আগামীর দিন কাটবে। কে তাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেবে?
মিতু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমার সাত বছর বয়সী মেয়ে হুমায়রা ইসলাম লামহা ও চার বছর বয়সী ছেলে আমির হামজা তাদের বাবার শোকে কাতর। ওরা এখন সবকিছু বুঝে। প্রতি বছর ঈদের আগে চাঁদ রাতে পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা করে আনত মোরসালিন। আমার ছেলে-মেয়ে সেই জামা পরে ঈদ করত, আমরা সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতাম। এবার এসবের কিছুই হলো না। তাদের বাবা যে পৃথীবিতে নেই সেটা তারা বুঝতে পারছে! আমার কথা বলার ভাষা নেই।
এদিকে নিহত নাহিদ ও মোরসালিনের পরিবারকে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সেই কথা রাখেননি ব্যবসায়ী নেতারা। নিহত দুই পরিবারের লোকজন ঢাকাপ্রকাশকে জানান, তাদের অন্যান্য ব্যবসায়ী গ্রুপ, ব্যক্তি ও সংগঠন সহায়তা করলেও নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা করা হয়নি।
অন্যদিকে ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, তাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব হয়েছে, তারা ততটুকুই করেছেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতা হেলাল উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, নিহতদের দুই পরিবারের সদস্যদের ভালোভাবে চলার জন্য ছোট পিকআপের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
এদিকে নিহতদের পরিবার বলছে, নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা কোনো অনুদান দেয়নি। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন এসে ঈদের তিন দিন আগে কিছুক্ষণ কথা বলে গেছে। পরে হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে গেছেন। বলেছেন, পরে তারা বিষয়টি দেখবেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাদের জন্য তার স্বামীর প্রাণ গেল, তারা এগিয়ে এল না। যারা তার স্বামীর প্রাণ নিল, তাদেরও এখনো কিছুই হলো না। দুই সন্তান নিয়ে কীভাবে সংসার চালাব কেউ তো খোঁজ নিল না?,
মোরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ ঢাকা প্রকাশকে বলেন, আমার ভাই সামান্য দোকান কর্মচারী ছিল। তার কী দোষ ছিল। অথচ তাকে বিনা কারণে প্রাণ দিতে হলো। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী নেতারা কোনো সহায়তা করেননি। শুধু তাদের পক্ষ থেকে এসে দেখা করে গেছেন। কিন্তু পরে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানালেও এখন পর্যন্ত তাদের কোনো খবর নেই।
সংঘর্ষের পর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিহত দুই ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, তিনি দুই পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং যতটুকু পেরেছেন দুই পরিবারের হাতে সেই সহায়তা দিয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপ ১০ লাখ করে আর্থিক অনুদান দিয়েছে, কিন্তু আমাদের ওই পরিমাণ হয়তো দেওয়া সম্ভব হবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু করতে চাই। প্রচার করে করতে চাই না। এখন দুই পরিবারের লোকজন যদি বলে, তাদের সহায়তা করা হয়নি তাহলে আমার কথায় কিছু যায় আসে না, তাদের কথাই সঠিক হবে।
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত নাহিদের চাচা সাইদ এবং মোরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলা দুটি তদন্ত করছে ডিবি রমনা বিভাগ। নাহিদের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। তবে মোরসালিনের মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ডিবি রমনা বিভাগের এডিসি ফজলে এলাহী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পরিবারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে ডিবি পুলিশের উপর। নাহিদের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখনও দুটি মামলায় গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল নিউমার্কেট ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকারদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ ও নিউ সুপার মার্কেটের দোকান কর্মচারী মোরসালিন।
কেএম/এসএন