লোকে লোকারণ্য হাতিরঝিল, সংসদ প্লাজা

মহামারির অপঘাতমুক্ত পৃথিবীতে দুই বছর পর চিরচেনা রূপে ফিরেছে মুসলমানদের ঈদ উৎসব। উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো দেশ। রাজধানী ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দুপুরের পর থেকেই বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করতে থাকেন নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষ।
মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদুল ফিতরের সকালে ঈদের জামাতের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। ঈদ জামাতের মধ্যেই দেশের বিভিন্নস্থানে এক পশলা বৃষ্টি উৎসবে কিছুটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করলেও দুপুরের পর থেকে আকাশ ছিল পরিচ্ছন্ন।
রাজধানী ঢাকায় দুপুরের পর থেকেই সব বয়সী মানুষ নতুন পোশাক পরে ঘুরতে বের হন। ভিড় করতে শুরু করেন রাজধানীর মুক্ত প্রাঙ্গণগুলোতে। ফলে রাজধানীর হাতিরঝিল, মানিক মিয়া এভিনিউ, সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, ক্রিসেন্ট লেক, চন্দ্রিমা উদ্যান, লেক রোড, ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নিকুঞ্জ লেক, উত্তরার বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র, বাসিলার মধুসিটি এলাকা লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়। এ সব এলাকায় নানা পণ্যের মেলাও বসে। ছিল বিনোদনের নানা আয়োজন।
শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষের উপস্থিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ঘুরে বেড়িয়ে নানাভাবে আনন্দে মেতে ওঠেন তারা।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দেখা গেছে হাজারো মানুষের ভিড়। কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছেন কেউ হাঁটছেন কিংবা গল্প করছেন। কেউবা আবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ঘুরতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর ঈদে ঘর থেকে বের হতেই পারিনি। আজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে আসলাম। ভীষণ ভালো লাগছে। বাচ্চারাও আনন্দ পাচ্ছে। মজা করছে। সবাই ভীষণ খুশি।
ঘোড়ার গাড়িতে পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে উঠেছেন খোরশেদ আলম। বললেন, অনেকদিন পর সবাই মিলে আনন্দটা উপভোগ করছি।
সংসদ ভবনের সামনে হকাররা বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেছেন। ছোট ছোট বাচ্চারা মা-বাবার কাছে বায়না ধরে সেগুলো কিনছে। কেউবা খেলনা কিনছে, কেউ আইসক্রিম খাচ্ছেন। আনন্দের যেন শেষ নেই। মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে গত দুই বছরের সমস্ত ক্ষুধা আজ এক দিনেই তারা মিটিয়ে নিচ্ছেন।
হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো হাতিরঝিল লোকে লোকারণ্য। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। রাস্তার পাশে গাড়ি মোটরসাইকেল পার্কিং করে লোকজন ফুটপাথ ধরে হাঁটছেন। কেউ কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউবা আবার ছবি তোলায় মগ্ন। কেউবা ব্যস্ত ছিলেন নৌভ্রমণে।
শিরিন ও পাভেল দম্পতি বললেন, কতদিন পর এমন পরিবেশের দেখা মিলল বলে বুঝাতে পারব না। প্রাণ খুলে আড্ডা দেওয়া যাচ্ছে। এত মানুষের ভিড় তারপরও খারাপ লাগছে না।
হাতিরঝিলের রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট সংলগ্ন এলাকায় কথা হল তরুণী আফসানার সঙ্গে। বললেন, আমরা কয়েক বান্ধবী মিলে ঘুরতে এসেছি। গত দুই বছর তো ঈদে বাসা থেকে বের হতে পারিনি। ঘরবন্দি কাটিয়েছি পুরোটা সময়। এবার যেন নিশ্বাস নিতে পারছি।
আর যেন করোনার মতো মহামারি পৃথিবীতে হানা না দেয় এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এই তরুণী বলেন, দেখেন করোনা পুরো পৃথিবীটাকে থমকে দিয়েছিল। লাখ লাখ মানুষের প্রাণ গেল। সবকিছু স্থবির হয়ে গেল। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ঘরবন্দি হয়ে গেল। আমরা এমন জীবন চাই না। আমরা চাই মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে।
চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরতে আসা শামীমা বললেন, এ যেন দুই বছর পর বন্দিজীবন থেকে বের হলাম। মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। করোনামুক্ত পৃথিবীতে এবারের ঈদ আনন্দ।
এনএইচবি/এপি
