তেঁতুলতলা মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা, এবারও ঈদের জামাত
বরাবরের মতো এবারও ঈদের নামাজের জামাত তেঁতুলতলা মাঠে করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন মাঠ থাকবে, ঈদের জামাতও হবে। এই মাঠ কেউ নিতে পারবে না। প্রয়োজনে তারা আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠে নাগরিক সমাজের ব্যানারে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশ থেকেই এ ঘোষণা আসে।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সহসভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ আরও অনেকে।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘যে জায়গায় থানা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে একজন স্থপতি হিসেবে বলতে পারি এই জায়গাটি থানা হওয়ার উপযুক্ত না। কারণ একটি থানায় যে সংখ্যক গাড়ি ডাম্পিং হয় সেই জায়গা এখানে নেই।
পুলিশ জনগণের বন্ধু এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আপনারা যদি জনগণের বন্ধু হয়ে থাকেন তাহলে বন্ধুর সম্পত্তি গ্রাস করছেন কেন? বন্ধু হয়ে বন্ধুর সম্পত্তি গ্রাস করতে পারেন না। এখানে যদি থানা নির্মাণ করা হয় তাহলে সেটি থানা নয় শত্রু ভবন হিসেবে পরিচিত হবে।’
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজতে। তারপরও যদি পুলিশের লোক এখানে থাকেন এবং নির্মাণ কাজ করেন তাহলে ধরে নিতে হবে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। বুঝতে হবে পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্য চায় সরকার যেন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়।
তিনি থানা নির্মাণের কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পুলিশ বাহিনীকে বলব আপনারা বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দিন। এখানে কোনো অবস্থাতেই থানা দেখতে চাই না। মাঠ থাকবে এই মাঠে এবারও ঈদের জামায়াত হবে। পাশাপাশি তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং জনপ্রতিনিধিদের এই আন্দোলনে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রত্না আপার জয় হবেই। আমাদের এই প্রতিবাদ কোনো থানার বিরুদ্ধে নয়, বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, আমাদের লড়াই সুস্থ পরিবেশে বেঁচে থাকার লড়াই, বেআইনিভাবে জবরদখলের বিরুদ্ধে লড়াই।
তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে এই মাঠে পুলিশ দেখতে চাই না। এই মাঠ জনগণের মাঠ জনগণের হাতেই থাকবে। এখনও যারা পুলিশের ভয়ে ভিত হয়ে রাস্তায় নামেননি তাদের মাঠে নামতে হবে। এখানে ভয়ের কিছু নেই আমাদের লড়াই সত্যের পক্ষে ন্যায়ের পক্ষে আইনের পক্ষে। মাঠের জায়গা উন্মুক্ত থাকবে। এই এলাকায় যদি বিকল্প জায়গা থাকে তাহলে সেখানে থানা হবে। সরকার চাইলে আমরা জায়গা খুঁজে বের করতে সহায়তা করব। আমরা চাই এই মাঠে এবারও ঈদের জামাতে মানুষে ভরে উঠুক।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সরকারি কাজের নামে নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন। সাধারণ নাগরিককে ভয়-ভীতি দেখানো আপনাদের কাজ না। আপনারা বেআইনি কাজ করছেন সংবিধান বহির্ভূত কাজ করেছেন। মাঠ রক্ষার আন্দোলন বন্ধ করার জন্য যে মুচলেকা নিয়েছেন এটা সংবিধান বিরোধী কাজ। মাঠ রক্ষা আন্দোলকারী সৈয়দা রত্না ও তার সন্তানকে কেন আটক রাখা হলো তার সঠিক তদন্ত হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পরও যদি কাজ চলে তাহলে শুধু প্রতিবাদ সমাবেশ না, প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালাতে হবে। সেজন্য আমরা প্রস্তুত।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক, খাল দখলমুক্ত রাখতে প্রয়োজনে দখলদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সৈয়দা রত্না প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতে গেছেন। আপনারা (পুলিশ বাহিনী) কার নির্দেশ পালন করছেন? মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী একজন মা সেই মায়ের জাতকে গারদে ঢুকানোর যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন এটি দুর্বিতায়ন। রত্না গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পালন করতে আপনারা বিনা আইনে বন্ধ করার চিন্তা করছেন তাহলে আপনারা কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন?
তিনি বলেন, আইজিপি প্রায়ই বলেন পুলিশ বাহিনী হবে মানবিক পুলিশ। এটা কি মানবিক পুলিশের নমুনা। মানবিক পুলিশ বাহিনী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান দখল করবে এটা কি তাদের কাজ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বিকল্প জায়গা খুঁজতে তারপরও কেন এখানে পুলিশ বাহিনী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি জরুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। এরপরও যদি নির্দেশনা না মানে তাহলে বুঝতে হবে দুর্বিসন্ধি আছে। মাঠ দখলমুক্ত করতে আমরা এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব। এই ঈদে এলাকাবাসীকে নিয়ে ঈদের জামাত এই মাঠেই করতে চাই। আমরা মাঠ ছাড়ছি না। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি কি এই এলাকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত? নাকি ভোট ছাড়াই নির্বাচিত। আপনি যদি জনপ্রতিনিধি হোন তাহলে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।
সৈয়দা রত্না বলেন, এই মাঠ ঘিরে অনেক স্মৃতি। কোনোভাবেই যেন এই মাঠ হাত ছাড়া না হয়। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনভাবেই যেন এই মাঠটি দখল না হয়, আপনি আমাদের মাঠটা ফিরিয়ে দেন।
এসএম/আরএ/