প্রস্তাবিত পাতালরেলে একজন যাত্রীর মাসিক ভাড়া ২০-২৫ হাজার টাকা!
প্রতীকী ছবি
ঢাকায় প্রস্তাবিত পাতালরেল নির্মাণের পর সেটিতে এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে একজন নিয়মিত যাত্রীর প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে বলে জানিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এমন ব্যয়বহুল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ঢাকা শহর ও ঢাকাবাসী এখনো প্রস্তুত নয়। এজন্য তারা পাতালরেলের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে ঢাকার যানজট সমাধানের জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত ও উন্নত বাস সার্ভিসের প্রতি জোর দিয়েছেন।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে তারা এ সব কথা বলেন।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকায় প্রস্তাবিত পাতালরেল (সাবওয়ে) নির্মাণ করতে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
টেকসই পরিবহন পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতায় উপযোগিতা বিশ্লেষণ’শীর্ষক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।
এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা শহরে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫৮ কিলোমিটার পাতালরেল নির্মাণ করতে চায় সরকার। এতে রুট থাকবে মোট ১১টি। এর মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে চারটি রুট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাথমিক নকশা তৈরির কাজ শেষ হবে। আর এ কাজেই ৩১৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
তিনি আরও বলেন, ২৫৮ কিলোমিটার পাতালরেল তৈরিতে মোট ব্যয় হবে ৬৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে চারটি রুট নির্মাণ করতে যে ব্যয় হবে, তা চলতি অর্থবছরে দেশের মোট বাজেটের প্রায় অর্ধেক।
এমন ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়ার জন্য ঢাকা শহর প্রস্তুত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেসব দেশে পাতালরেল নির্মাণ করা হয়েছে, সেসব দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ গুণ বেশি।’ ঢাকার সমস্যা সমাধানে সাশ্রয়ী ব্যয়ে রেলপথ উন্নয়ন, পথচারীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণ ও বাসসেবাকে উন্নত করার পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আইপিডির পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মানুষ তার আয়ের কত শতাংশ যাতায়াতে ব্যয় করবেন, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।
তিনি বলেন, পাতালরেলে নিয়মিত যাতায়াতে একজনের মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। এ ছাড়া পুরান ঢাকা ছাড়া শহরের অন্যান্য অঞ্চলের মাটির অবস্থাও খারাপ। এমন মাটির নিচ দিয়ে রেলপথ তৈরি করলে খরচও বেশি হয়। তাই খরচের বিষয়টি বিবেচনা করে আপাতত পাতালরেল নির্মাণ না করার পক্ষে মত দেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ।
অনুষ্ঠানে পরিবহন বিশেষজ্ঞ এস এম সালেহ উদ্দিন জানান, ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) যে সুপারিশগুলো করা হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে পাতালরেল নিয়ে সমীক্ষার দরকার হতো না। পাতালরেল না করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে চলমান উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে মানুষ বিরক্ত। এসব কাজ দ্রুত শেষ করা এবং ‘বাস রুট র্যাশনালাইজেশন’বাস্তবায়নের উপর জোর দেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে আইপিডির উপদেষ্টা ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ পাতালরেল শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের গলার কাঁটা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বড় প্রকল্প ঋণের বোঝাও বাড়ায়। তাই বড় প্রকল্প না নিয়ে, ব্যয়সাশ্রয়ী প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরের সমস্যা সামাধানের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ২০৫৭ সালে পাতালরেল থেকে লাভ আসা শুরু হবে। এমন প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এমন প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিত শহর না গড়ে আমরা পদে পদে ভুল করেছি, এখন যার মাশুল দিতে হচ্ছে। আবারও তেমন ভুল হওয়া দুঃখজনক।
ভার্চ্যুয়াল এই সংলাপে সূচনা বক্তব্য দেন আইপিডির পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন প্রমুখ।
আরএ/