যে ১০ দফা দাবি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। সম্মেলনে এ হামলার উস্কানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসব দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার পর ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব দাবি জানান। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন কথা বলেন- ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সুজয় বালা ও মাসুম বিল্লাহসহ এ সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজন।
এর আগে বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত আটটায় এ বিষয়ে সাধরণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে চায় কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জনি হাসান ও সুমনের একটি অংশ। পরে তারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের চাপে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ৩ ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রাখে। পরে সাংবাদিকরা ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে চলে যান। এরপর রাত ১১টার পর নতুনভাবে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সংঘর্ষে আহত সাধারণ ছাত্ররা।
এ সংবাদ সম্মেলনের সময় কলেজ ছাত্রলীগের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা বলছে, কলেজে কমিটি না থাকায় সিনিয়র কেউ সংবাদ সম্মেলন বা প্রেস এর সঙ্গে কথা বলতে চায় না।
এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে সুজয় ও মাসুম ১০টি দাবি ঘোষণা করেন। সেগুলো হলো-
১. এই ন্যাক্করজনক হামলার উস্কানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. আহত সকল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সকল দায়ভার নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিতে হবে।
৩. হকারদের হামলায় নিহত পথচারী নাহিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৫. দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ডিসি, এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসিটিভি স্থাপন করতে হবে।
৭. প্রতিটি মার্কেটে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আচরণ বিধি প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ কার পার্কিং উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
৯. ক্রেতা হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মাকের্টে ঢাকা কলেজের সম্পদ লিজ বাতিল করে ফিরিয়ে দিতে হবে।
এদিকে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১১টায় ও দুপুর ২টায় ঢাকা কলেজের প্রধান ফটকে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করবেন শিক্ষার্থীরা। গণমাধমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হয়ে এ বার্তা দিয়েছেন আবদুল হাকিম।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। সংঘর্ষে দুই পক্ষের প্রায় চার শতাধিক মানুষ আহত হন। দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে গুরুতর আহত মোরসালিন নামে এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাওপাতালে মারা যান। এর আগে সংঘর্ষে আহত এক কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এ ছাড়া এ সংঘর্ষের খবর সংগ্রহে গিয়ে ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের হামলায় আহত হয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের অন্তত ১০-১৫ জন সাংবাদিক।
কেএম/টিটি
