ডিসি-এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহার চান শিক্ষার্থীরা
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহার চেয়ে ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার পর ঢাকা কলেজের শহীদ আ. ন. ম. নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী সুজয় বালা, মাসুম বিল্লাহসহ আহত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ঢাকা কলেজ বাঙালি ও ছাত্র সমাজের নৈতিক ও যৌক্তিক প্রয়োজনে সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। সম্প্রতি পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা এ ঐতিহ্যবাহী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেটি নোংরামির চরম মাত্রা অতিক্রম করেছে।
ঘটনার বিবরণ সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকানের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করা হয়। খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে কলেজের সামনের মিরপুর সড়কে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান।’
‘সেখান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা শিক্ষার্থীদের নামে গুজব ছড়িয়ে একযোগে হামলা চালান। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে।’
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ‘ডিএমপির রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে, এডিসি হারুন-অর-রশিদ ও নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম. কাইয়ুম ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করেই ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। আমরা এদের প্রত্যাহারের দাবি জানাই।'
‘পুলিশের উপস্থিতিতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকাররা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা চালান। হামলা প্রতিরোধ করতে গেলে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পর্যন্ত ঢাকা কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত শিক্ষার্থীরা এখনও রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরপর রাত ৩টায় ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।’
‘পরবর্তীকালে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ঘটনার তদন্ত ও বিচার চেয়ে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিবাদ জানায়। তখনও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে ফের ঐক্যবদ্ধভাবে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।’
‘এমনকি শিক্ষকরা প্রধান ফটকে গেলে তাদের, লাঞ্ছিত ও হামলা করে আহত করা হয়। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশ আবারও নির্বিচারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়।’
‘এক সময় শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নেয়। তখনও পুলিশ রায়ট কার থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ভেতরে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’
‘এই হামলার প্রধান ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন, ফরমান মোল্যা, জাহাঙ্গীর হোসেন, আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপুসহ আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'আমরা ডিসি-এডিসি ও ওসির প্রত্যাহার চাই। অন্যথায় আন্দোলন করতে বাধ্য হব।'
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, যদি আমাদের এসব দাবি মেনে না নেওয়া হয় তাহলে আমরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আবারও আন্দোলন শুরু করব।
কেএম/টিটি