যারা নগরবাসীর ঘুম হারাম করেছে তাদের আরামে থাকতে দেব না: আতিক
খেলার মাঠ, পার্ক, খাল, ডোবা দখল করে যারা নগরবাসীর ঘুম হারাম করেছে তাদের আরামে থাকতে দেব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেব বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে শ্যামলী মাঠে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও সবুজায়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতাধীন উন্নয়নকৃত ৭টি পার্ক/খেলার মাঠ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ সব কথা বলেন।
নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা বলে দিন কোথায় খেলার মাঠ দখলে আছে, কোথায় খাল দখলে আছে, কোথায় পার্ক দখলে আছে, আপনাদের নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে। আপনাদের নিয়ে সে সব খেলার মাঠ এবং পার্ক দখলমুক্ত করতে চাই। ঈদের পর রাজউকের সঙ্গে বসব। তারা আমাদের কাছে বুঝে দেবে কোথায় কোন পার্ক, মাঠ দখলে। জনগণকে নিয়ে আমরা তাদের (দখলদারদের) বিরুদ্ধে মামলা ঠুকব। তারা আর আরামে থাকতে পারবে না। তাদের ঘুম হারাম করে দেব। কারণ তারা নগরবাসীর ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, রাজধানীকে যানজট অবমুক্ত করতে হলে খাল উদ্ধার করতে হবে। খালগুলো দিয়ে নৌ চলাচল করতে পারলে ট্রাফিক জ্যাম অনেকাংশ কমে যাবে। সবুজ মাঠ আর পার্ক অক্সিজেনের আঁধার। সেই আঁধার এই মাঠগুলো আজ উন্মুক্ত করলাম। এই পার্ক নির্মাণ করতে গিয়ে দেখি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। মাঠগুলোতে দখলের সমস্যা ছিল। মাঠের মধ্যে সবকিছু দখল হয়েছিল। স্থানীয় জনগণ ও আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় সেই মাঠগুলো দখলমুক্ত করে পার্ক করা হয়েছে। আজ ৭টি পার্ক মাঠ জনগণকে উপহার দিলাম। এটি নববর্ষের উপহার। এখানে শিশু বৃদ্ধা নারী প্রতিবন্ধী সবার জন্য সমান সুযোগ থাকছে। এগুলো মাল্টিপারপাস পার্ক ও মাঠ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭টি পার্ক ও মাঠের নির্মাণ সম্পর্কে মেয়র বলেন, ১০ একর জায়গার মধ্যে এই ৭টি পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে কোনটি ১ একর কোনটি ২ একর আবার কোনটি তারও কম জায়গা নিয়ে করা হয়েছে। এখানে সব বয়সের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা থাকবে। প্রতিবন্ধীরাও অনায়াসে ঘুরতে পারবে। এই ৭টি পার্ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পার্কে বর্ষার সময় যেন পানি না জমে সেভাবেই নকশা করা।
ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর কড়া সমালোচনা করে মেয়র বলেন, অনেক ডেভেলপার কোম্পানি মানুষকে স্বপ্ন দেখায় এখানে প্লট কিনলে মাঠ পাবেন পার্ক পাবেন। পরে যখন প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির সময় আসে তখন আর মাঠ দেখাতে পারে না। এটি মানুষের সঙ্গে প্রহসন। আপনারা (ডেভেলপার কোম্পানি) এই দুনিয়াতে আপনাদের বিচার না হলেও আল্লাহর দরবারে বিচার হবে। আপনারা প্রহসন করেছেন মানুষের সঙ্গে। যখনই ধরতে যাই তখনই মামলা ঠুকে দেন। ড্রেজার দিয়ে বালু ভরাট করতে থাকেন, বালু ভরাট করেন তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না, কিন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে খালের জায়গাতে, ডোবা-নদীগুলো আপনারা দখল করবেন না। এগুলো তো আপনাদের জায়গা না, এগুলো জনগণের জায়গা।
খাল রক্ষার জন্য নতুন একটি ধারণার কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, আমরা দেখেছি খালপাড়ের বাড়িগুলো খালকে পেছনে রেখে ময়লা আবর্জনা ফেলছে। তাই খালপাড়ের প্রত্যেক বাড়ি যেন খালমুখি ভিউ হয় সেজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য আমরা খালপাড়ের বাড়ির মালিকদের সঙ্গে বসব। যেন কেউ বাড়ির পেছনে খাল না রাখে। খাল হবে বাড়ির সন্মুখ ভাগ তাতে করে মানুষ ময়লা ফেলতে পারবে না।
তিনি বলেন, খাল দিয়ে নৌকা চালাতে পারলে পানি চলাচল করবে। এটিই হওয়া দরকার। খাল দিয়ে নৌকা চলাচল করলে পানি সচল থাকবে। তখন আর মশার জন্ম হবে না। খালগুলো দখল করে পয়:বর্জ্য ফেলে এমন করা হয়েছে এখন আর খালে মাছের চাষ হয় না, ওখানে এখন মশার চাষ হয়। এটি বাস্তব সত্য কথা।
উদ্বোধন হওয়া পার্ক-মাঠগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয়দের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমরা যে মাঠ পার্ক করলাম এগুলো আপনাদের নববর্ষের উপহার। এটি রক্ষণাবেক্ষণ আপনাদেরই করতে হবে। ঢাকা শহর আমাদের সবার। ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হবে। মাঠগুলো নিজের সন্তানের মতো। সন্তানকে যেভাবে ভালোবাসি সেভাবেই মাঠকে ভালোবাসতে হবে। দেখাশুনা করতে হবে। আবার বর্ষা মৌসুম আসন্ন তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাবে। এজন্য নগরবাসীকে প্রতি শনিবার সকাল ১০ টায় ১০ মিনিট নিজের আঙিনা করি পরিষ্কার এই অঙ্গীকার করার আহ্বান জানান মেয়র।
শ্যামলী পার্কটিতে শিশুদের জন্য আলাদা জোন করা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন রাইড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ছোটদের এবং বড়দের জন্য পৃথক দুটি মাঠ করা হয়েছে। যেখানে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য আলাদা জায়গা করা হয়েছ। একটি উন্মুক্ত মঞ্চ করা হয়েছে। নান্দনিক এই পার্কটিসহ মোট ৭টি পার্ক সব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলো।
৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম রাস্টনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেলক হক, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও অন্যান্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররা।
এসএম/আরএ/