ঢাকায় ঘুরছেই না চাকা
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকেই তীব্র যানজট লেগে আছে। প্রতিদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঢাকার যানজট। রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া অসহনীয় যানজট প্রতিদিনই তার রূপ পাল্টে ভিন্ন মাত্রা ধারণ করছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
যানজটের দুর্ভোগ রাজধানীবাসীর জন্য নতুন নয়। তবে, রমজানে এ দুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তীব্র গরমে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ঢাকা শহরে ঘুরছেই না গাড়ির চাকা। তাদের দাবি, যানজট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনা না হলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে ঢাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
কয়েকদিন ধরে নগরজুড়ে অসহনীয় রূপ ধারণ করেছে যানজট। সামান্য পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে কয়েক ঘণ্টা। মন্থরগতিতে চলা যানবাহনে বসে হাঁসফাঁস করছেন বিভিন্ন বয়সী যাত্রীরা।
সকালে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে যানজট। যানজটের কারণে অনেক রোজাদার গাড়িতে বসেই করছেন ইফতার।
অনেকেই বলছেন, প্রতি বছরই রমজানে যানজট কিছুটা বাড়ে। তবে এ বছর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেট্রোরেল নির্মাণ, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজে যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্তায় ধীরগতির যানবাহন, উল্টোপথে গাড়ি চলাসহ নানা কারণে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। আবার সড়কের দু’পাশে অবৈধ যানবাহন পার্কিং ও ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যানবাহনকে রেজিস্ট্রেশন দান যানজটের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। ঘণ্টায় যানবাহনের গতি নেমে এসেছে তিন কিলোমিটারের নিচে।
সকালে বিমানবন্দর সড়ক, ডিআইটি সড়ক, খিলগাঁও রেলগেট, বাসাবো, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, ফকিরাপুল, পল্টন, শাহবাগ, কাকরাইল, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, বনানী, মহাখালী, মিরপুর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।
যাত্রাবাড়ী থেকে প্রেসক্লাবে এসেছেন সবুজ। তিনি বলেন, সকাল থেকে রাজধানীতে ব্যাপক যানজট জীবনটা বের হয়ে যাচ্ছে রোজা থেকে।
হাইকোর্ট মোড় কথা হয় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তিনি বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের অলিতে-গলিতে ব্যাপক যানজট লেগে আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা আর ভালো লাগেনা। ঢাকার শহর এখন যান জটের শহরে পরিণত হয়েছে।
প্রতিটি মোড় অতিক্রম করতে যানবাহনগুলোকে তিন থেকে চারটি সিগন্যালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে হিমশিম খেতে।
মিরপুর থেকে মতিঝিলে আসা আলেয়া বেগম বলেন, খিলগাঁও থেকে কষ্ট করে হেঁটে আসা যায়। কিন্তু মিরপুর থেকে হেঁটে মতিঝিলে আসা অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়েই তাকে বাসে আসতে হয়। মতিঝিলের একটি ব্যাংক কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, তার বাসা খিলগাঁও তালতলা। প্রথমে কিছুদিন রিকশা বা লেগুনায় করে অফিসে আসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিদিনই লেট করে অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তিনি সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর যানবাহনে উঠছেন না। হেঁটে অফিসে আসছেন। এতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারছেন।
উত্তরা থেকে শাহাবাগ আসা রাফিউজ্জামান বলেন, একেতো গরমে রোজা তারপর এতো যানজট, দিনের অনেকটা সময় রাস্তায় শেষ হচ্ছে। অফিস করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে একই যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যানজটের সাথে যুদ্ধ করতে করতে হাপিয়ে উঠেছি।
কথা হয় উত্তরা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট অপুর সঙ্গে। তিনি বলেন যানজট হলে আমাদের দোষ দেয় সবাই। কিন্তু যানজট নিরসনে কারোর কার্যকরী ভূমিকা নাই।
পল্টন মোড়ে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট খায়রুল আলম বলেন, রোজা থেকে আর ভালো লাগেনা। সকাল থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আমরা যুদ্ধ করছি এরপরেও যানজট লেগে থাকে আমরা আর কি করবো। তবে মেট্রোরেল ও সড়কের সংস্কারের কাজ শেষ হলে হয়তো যানজট কমে আসবে।
কেএম/এএস