পুরনো আবহে ইফতার বাজার, দাম চড়া
শুরু হয়েছে মুসলিম উম্মাহর পবিত্র মাস রমজান। সিয়াম সাধনার এ মাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষঙ্গ ইফতার। রোজার প্রথম দিনে রাজধানীর অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে পাড়া-মহল্লার ছোট দোকান পর্যন্ত সর্বত্র বাহারি ইফতারির পসরা বসেছে।
করোনাভাইরাসের আক্রমণে নাকাল বিশ্ব কিছুটা স্বস্তি পাওয়ায় বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমদের এবারের রমজানে উৎসব ফিরেছে পুরনো আবহে। যা গত দুই বছর ছিল না।
গত বছর কিছুটা শিথিল থাকলেও ২০২০ সালের রমজান ছিল ঘরমুখো। মসজিদে মুসল্লিরা পাঁচ জনের বেশি নামাজ আদায় করতে পারেনি। কোনো ইফতার বা সেহরি পার্টি ছিল না। গত রোজায় (২০২১) সেটি কিছুটা শিথিল হলেও পুরোপুরি ছিল না। তবে এবার করোনার প্রকোপও কম। নেই বিধিনিষেধও। এ কারণে এবার রোজায় সবাই সমবেতভাবে তারাবি যেমন আদায় করতে পারছেন, সেই সঙ্গে থাকছে ইফতার-সেহরি পার্টিও।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় ব্যবসায়ীদের ইফতার সাজানোর কাজ। দুপুর যত বিকেলের দিকে গড়াতে থাকে ততই বাড়তে থাকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমাবেশ। বাড়তে থাকে কোলাহল। জমে উঠে থরে থরে সাজানো রকমারি ইফতার বিক্রির ধুম। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসতেই বাড়তে থাকে বিক্রেতাদের হাঁক ডাক। নানা বয়সী ক্রেতাকে ঠোঙা ভর্তি করে নিয়ে যেতে দেখা যায় এসব খাবার। ছোলা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী, মুড়ি, কাবাব, জিলাপি, হালিম, বুরিন্দাসহ নানা স্বাদের ইফতার কিনতে আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ক্রেতারা এসে ভিড় করেন ইফতারের দোকানগুলোতে। ক্রেতারাও খুশি, হাতের নাগালে ক্ষণিকের মধ্যে টাকার বিনিময়ে পেয়ে যাচ্ছেন অনেক রকমের ইফতার। প্রতি কেজি ছোলা ১শ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, বুরিন্দা ও জিলাপি বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। আবার বেশির ভাগ মানুষ কিনছে খুচরা দামে। জিলাপির পিছ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে। পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী পিছ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা দরে।
এদিকে প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁয় পার্সেলের পাশাপাশি রয়েছে ইফতার করারও ব্যবস্থা। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের সঙ্গে সঙ্গে খাবারের দামেও দোকান-ভেদে ভিন্নতা দেখা গেছে। এদিকে রাজধানীতে ঐতিহ্যবাহী ইফতারির কথা বললে সবার আগে আসে চকবাজারের নাম। এরপর রয়েছে বেইলি রোড, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর বিভিন্ন ইফতার বাজার। এছাড়া ফুটপাত থেকে পাঁচ তারকা হোটেল পর্যন্ত সর্বত্রই পাওয়া যায়।
এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতি বছর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রায় চার হাজার লোকের ইফতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে চালু থাকে ইফতার। সেই সঙ্গে ব্যক্তি ও পরিবারেও ইফতারের দাওয়াত কালচার চালু রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, গত দুই বছরের প্রেক্ষাপট ছিল একরকম, তবে এবার ভিন্ন। সরকারের বিধিনিষেধ সবসময় আমরা মেনে চলি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা এসেছে, ভ্যাকসিন নিয়েছে, তাই সরকার সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে। এ জন্য বলা যায়, রোজা ফিরেছে ২০২০ এর আগের ধারায়।
গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতিতে মহল্লার অলিতে-গলিতে খুব বেশি ইফতারের দোকান বা পসরা দেখা যায়নি। তবে এবার আবারও অলি-গলিতে দোকান সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দোকানিরা। মগবাজার, বেইলি রোড, ইস্কাটনের নিয়মিত কতিপয় ব্যবসায়ীরা জানান, গেল দুই বছর তারা ঠিকমতো ইফতারের দোকান সাজাতে পারেননি। কিন্তু এবার তারা ধুমসে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চকবাজারের শাহী মসজিদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা এবার ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন নানা স্বাদের বিভিন্ন আইটেমের ইফতার বিক্রির। প্রায় দুই বছর পর এবার ইফতারের দোকানগুলো থেকে খাবারের মনকাড়া সুবাস আর বিক্রেতাদের ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়’ হাঁকডাকে মুখরিত চকবাজার এলাকা।
চকবাজারের ইফতার কিনছেন আব্দুল আলিম তিনি অভিযোগ করে বলেন, এবার ইফতারের জিনিস এর দাম অনেক, এই দাম সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
তিনি বলেন, আমি কিনতে পারছি কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষরা তো কিনতে পারবেন না।
কেএম/আরএ/