ছাত্রীকে গণধর্ষণ মামলার বাদী প্রক্টর স্যার কী হেরে গেলেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীকে বন্ধুর সঙ্গে বেড়িয়ে ফিরে আসার সময় একদল সন্ত্রাসী ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে নয়টায় জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ ও এর প্রতিবাদে পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর ছয়টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামা গোপালগগঞ্জের উচ্চতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র, ছাত্রী, অধ্যাপক ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.কিউ.এম মাহবুবকে লাঠি, ইট নিয়ে আক্রমণের প্রতিবাদে এরপর টানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আন্দোলন করে যাওয়া ছাত্র, ছাত্রীরা তাদের প্রক্টর ও ছাত্রীকে গণধর্ষণের মামলার বাদী সহযোগী অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমানের আহবানে আন্দোলন ৭২ ঘন্টার জন্য আলটিমেটাম দিয়ে স্থগিত ঘোষণা করেছিলেন।
ঢাকা প্রকাশ ২৪.কমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, ছাত্র, মেধাবী ও পরিশ্রমী সাংবাদিক সফিকুর আহসান ইমন জানিয়েছেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মধ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি, সোমবার, প্রক্টর স্যার ড. রাজিউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সমমনা অধ্যাপককে নিয়ে আসেন। তাকে পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি।’
ইমন বলেছেন, “প্রক্টর স্যার আমাদের আন্দোলনকারী ছাত্র, ছাত্রীদের সামনে এসে বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কথা দিচ্ছি এই বৃহস্পতিবারের মধ্যে (৩-৩-২০২২) তোমাদের ওপর হামলাকারীদের বিপক্ষে মামলা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমার নিজের ব্যক্তিগতভাবে আমি এই দায়িত্বটি গ্রহণ করছি।”
“অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান আরো জানিয়েছেন, ‘যদি বৃহস্পতিবারের মধ্যে কোনো মামলা না হয়, তাহলে তোমরা সবাই গিয়ে আমার অফিসরুম ঘেরাও করে ফেলো। এখন আন্দোলন বন্ধ করে ভালোভাবে থাক। পরে আবার আন্দোলনে দরকারে বসে পড়ো’।”
‘ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করার অপরাধে সন্ত্রাসী বাহিনীর বিপক্ষে ২৩ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জে গভীর রাত সাড়ে ১১টায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে মামলা করার বাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক, ভালো মানুষ ড. রাজিউর রহমানের এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত, দিন টানা আন্দোলনে নামা ছাত্র, ছাত্রীরা আস্তে, আস্তে উঠে পড়েন।’
ফলে ২ মার্চ, বুধবার তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়া, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে তৈরি সংগ্রাম থেকে বিকাল সাড়ে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করে সরে আসেন। তাতে তারা মোট ৭২ ঘন্টা বা তিনটি দিন আলটিমেটাম হিসেবে ঘোষণা করেন। তাদের চূড়ান্ত দাবীগুলো পূরণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থানের শিক্ষাথীরা।
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে গণধর্ষণ মামলার বাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমানের আশ্বাস, তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তার কথানুসারে, পরদিন বৃহস্পতিবার ৩ মার্চ সারাদিনের মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম মাহবুবের ক্যাম্পাস কোনো মামলা দায়ের করেনি।
কেন কোনো মামলা করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপকদের ভূমিকা কী-এই প্রশ্নগুলোর জবাব চেয়ে বারবার এই প্রতিবেদক অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমানকে মোবাইল ফোনে ফোন করেছেন।
তিনি থাকতে না পেরে ছাত্রের ফোন ধরেছেন। তবে কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য প্রদান করেননি। অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমান কেবল একটিই কথাই জানিয়েছেন, ‘তুমি রেজিস্টার স্যারের সঙ্গে কথা বল।’
৭২ ঘন্টার আলটিমেটামের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যক্ষ বিক্ষুদ্ধ ক্যাম্পাসের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার মো. মুরাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেছেন, ‘আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। একটি মামলা দায়ের করা হবে জানি।’
এরপর এই প্রতিবেদক মামলা দায়ের করা হয়েছে কি না এই প্রশ্নের জন্য গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
থানার অফিসার-ইন-চার্জ বলেছেন, ‘ছাত্রদের পক্ষ থেকে মামলা করতে এখনো কেউ আসেননি।’
ওএস।