কুয়েটে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উত্তেজনা, দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ছবি: সংগৃহীত
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের দ্রুত কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সংঘর্ষ থামলেও ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দুই প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, সংঘর্ষের প্রতিবাদে এবং কুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার অভিযোগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ খুলনা মহানগর ও জেলা কমিটির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা নাইম মল্লিক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেন, যা নিয়ে মঙ্গলবার উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সদস্যরা ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে ছাত্রদলের কর্মীরা অবস্থান নিলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং বহিরাগতরা এতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রদলের একজন নেতা অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের সদস্যসহ কিছু ব্যক্তি ছাত্রদলের রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে, যার ফলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। অপরদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, “কুয়েটে ছাত্রদল নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের মতো নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে তারা নিজেদের রাজনৈতিক কবর রচনা করছে।”
কুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, “আমরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের হুমকি দেয় এবং সিনিয়রদের লাঞ্ছিত করে। পরে তারা বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তখন আমরাও প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিই। কিন্তু তারা পরে বাইরের লোকজন নিয়ে এসে আবার হামলা চালায়, এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির মুখপাত্র মিরাজুল ইসলাম ইমন বলেন, “ছাত্রদল কর্মীরা বিনা উসকানিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরিয়েছে। আমাদের সদস্য সচিব জাহিদ ভাইকে রামদা দিয়ে ১০টি কোপ দেওয়া হয়েছে। জেলার আহ্বায়ক তাসনিম ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব রাতুলের পা ইট দিয়ে থেতলে দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সব তথ্য পরবর্তীতে জানানো হবে।”
অন্যদিকে, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, “ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিরোধ করে, যার ফলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।” তবে মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে শুনেছি। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই এবং দোষীদের বিচার চাই।”
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব যৌথভাবে কাজ করছে।”
বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্থির থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
