শেখ মুজিবের ছবিতে মন্তব্য: শিবির ট্যাগ দিয়ে ৪ মাসের জেল, শিক্ষাজীবন শেষ!
সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষার্থী ফয়েজ আমহেদ। ছবি: সংগৃহীত
সাময়িক বহিষ্কার করে পাঁচদিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দীর্ঘ চার বছর ক্লাসে ফেরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ফয়েজ আমহেদ।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নিজ পরিবারসহ সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমেদ নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ কাহিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর মুহম্মদ মুমিন আদদ্বীন নামক একটি আইডি থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নামক একটি গ্রুপে নোবিপ্রবির বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভিপি নুরের ছবি এডিট করে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটির সমালোচনা করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি শাহরিয়ার নাসের আবার পোস্ট করে লিখেছেন কত বড় দুঃসাহস। সেই পোস্টে আমি কমেন্ট করেছিলাম, এখানে দুঃসাহসের কিছু তো দেখছি না। এই একটি কমেন্টের কারণে আমাকে জেল খাটিয়ে বেআইনিভাবে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ফয়েজ বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোনোপ্রকার তদন্ত ছাড়াই ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার দিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই ঘটনায় শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান বিপ্লব মল্লিককে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে সদস্য হিসেবে ছিলেন তৎকালীন প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক আফসানা মৌসুমী, ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট আনিসুজ্জামান রিমন এবং সদস্য সচিব ছিলেন নোবিপ্রবি বিএনসিসির পিইউও এ কিউ এম সালাউদ্দিন পাঠান।
তিনি আরও বলেন, কোনও প্রকার মামলা ছাড়াই শিবির ট্যাগ আমাকে পরদিন গ্রেফতার করা হয়। ১৬ অক্টোবর নোবিপ্রবি ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা প্রিতম আহমেদ বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগে মামলা করেন। যেখানে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন তৎকালীন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নাসের, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব এবং বিএমএস বিভাগের শিক্ষার্থী ও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির। দীর্ঘ চার মাস আমি কারাগারে থেকে পরবর্তীতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জামিন পেয়ে বের হয়ে আসি।
ফয়েজ অভিযোগ করে বলেন, আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা তো করেই নাই বরং আমার পরিবারকেও নানাভাবে হেনস্তা করেছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে পরিবারের পক্ষ থেকে আমার বড় ভাই রাজু আহম্মদ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু সেই প্রত্যাহার আবেদনটি রেজিস্ট্রার বরাবর ফরোয়ার্ডিং করতে বাধা দেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া। পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতিদিনই আমার পরিবার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করতো। কিন্তু আমার নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ফরোয়ার্ডিং না দিয়ে উল্টো আমার পরিবারকে হেনস্তা করতেন। আমি যখন কারাগার থেকে বের হই, ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যেতাম তারা বলতো তোমার বিভাগের চেয়ারম্যান অনুমতি দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আবার যখন চেয়ারম্যানের কাছে যেতাম তখন তিনি বলতেন আমার হাতে কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনও আপোস আমি করতে পারবো না।
ফয়েজ বলেন, এভাবে দীর্ঘ চার বছর নানাভাবে চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। আমার সহপাঠীরা যখন ক্লাস করতো তখন আমি চেয়ারম্যানের অফিসে বসে বসে চোখের পানি ফেলতাম। আমার বাবা একজন আলেম মানুষ, আমার ভাই শিক্ষক। তারা আমার পরিবারকে দিনের পর দিন হয়রানি করতো। আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া আমার পরিবারকে নানাভাবে হেনস্তা করতো। আজকে পড়ালেখা করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। মিথ্যা মামলা এবং হয়রানির কারণে ঋণে জর্জরিত হয়ে আমার পরিবার আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর আমি তাকে আমার সঙ্গে করা অন্যায় স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি নোয়াখালীতে দায়িত্বরত সেনবাহিনীর অফিসার দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দুঃখ প্রকাশ করে তাকে শান্তির আওতায় নিয়ে আসেন।
ফয়েজ তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচার চেয়ে বলেন, আমি এর বিচার চাই। নোবিপ্রবি প্রশাসন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমার এই অন্যায়ের বিচার চাই।
ভুক্তভোগী ফয়েজ আহমেদের বড় ভাই রাজু আহমেদ বলেন, একটা মিথ্যা এবং বানোয়াট বিষয়ে আমার ভাইয়ের জীবনটা তারা নষ্ট করে দিয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হলেও সে ক্লাস পরীক্ষায় ফিরতে পারেনি। দীর্ঘ তিন বছর অমানসিক কষ্ট করেছি আমরা। শত চেষ্টা করেও নোবিপ্রবিতে পড়ালেখা চলমান না করতে পেরে আমরা তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা এর জন্য দায়ী আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বিচার চাই। বিশেষ করে যারা তদন্ত কমিটিতে ছিল তারাও এর জন্য দায়ী। তারা কোনও তদন্ত না করেই ফয়েজকে সাময়িক বহিষ্কার দিয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে এই বিষয়ে আর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তারা আওয়ামী দোসরদের পক্ষ হয়ে কাজ করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। প্রথমত বহিষ্কার করা এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড এবং একাডেমিক কাউন্সিলের হাতে। চেয়ারম্যান হিসেবে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া আমার হাতে ছিল না।