অনিয়মেই সেই প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন কুবি উপাচার্য
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সেই নির্দিষ্ট প্রার্থীকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। তাকে নিতে একের পর এক অনিয়মের পসরা সাজিয়েছেন তিনি। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) তার ভাইবা বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশের কারণে আবু ওবায়দা রাহিদ প্রার্থীকে নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ওই প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত মানের চেয়ে কম। এর পরও তাকে নিতে অভিনব উপায়ে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে অননুমোদিত একটি অনুবিধি যোগ করা হয়। ওই অনুবিধিতে উল্লেখিত যোগ্যতাসমূহ নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর রয়েছে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা থেকে ভাইবা বোর্ডের জন্য চারজন প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়। ওই চারজনের মধ্যে আবু ওবায়দা রাহিদও রয়েছেন। বাকি তিনজন হলেন- আরিফুল ইসলাম পাটোয়ারী, গৌতম সাহা, ও রাবেয়া জান্নাত। এ ছাড়াও বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশকৃত তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম না থাকলেও রেজিস্ট্রার দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম যুক্ত করেন।
এদিকে পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা যাবে এমন কিছু লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রে উল্লেখ করা যাবে না-এমন নির্দেশনার পরও ওই প্রার্থী তার উত্তরপত্রে বিশেষ ‘চিহ্ন’ ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিষয়টি ধরা পড়লে পরবর্তীতে পর্যালোচনার জন্য হল পরিদর্শকই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে তার স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের শুধুমাত্র তাদের অংশটুকুই মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে তাদের থেকে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে একাধিক বোর্ড সদস্যের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে দুইজন সার্বিক মূল্যায়নের বিষয়ে তাদের কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন।
সাধারণত নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা মিলে কাটমার্ক বা পাস নম্বর নির্ধারণ করে থাকেন। নিয়োগ বোর্ডের সভার কার্যবিবরণীতে তা উল্লেখ থাকে। ন্যূনতম ওই নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরই পরবর্তীতে ভাইবার জন্য ডাকা হয়। এর ফলে কে কত নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ হলো তা জানা যায়। তবে মার্কেটিং বিভাগের কাটমার্ক কত নির্ধারিত হয়েছিল-এ বিষয়ে জানেন না বোর্ড সদস্যরা। উপাচার্য নিজের মতো করেই প্রার্থীদের মনোনোয়ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বোর্ড সদস্যদের একজন এ বিষয়ে তার থেকে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করে বাকী কথা বলতে রাজি হননি।
এ ছাড়াও লিখিত পরীক্ষা থেকে যে সকল প্রার্থীকে ভাইবা বোর্ডের জন্য মনোনীত করা হয় তাদের তালিকা প্রকাশ্যে দেওয়ার রীতি থাকলেও কুবি উপাচার্য সেসবেও বিরত ছিলেন। মনোনীতদের শুধুমাত্র রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ফোন করে ভাইবার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের সুযোগ বিস্তৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের কথা বলে অযোগ্যদের নিতে যে রকম অনিয়ম করছেন তাতে শিক্ষকের ওপর শিক্ষার্থীদের অশ্রদ্ধা তৈরি হবে। সর্বোচ্চ নির্বাহী হয়ে তিনি একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন, যা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দেবে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এসআইএইচ