ইউজিসির নির্দেশনাকে অমান্য করে স্বপদে বহাল প্রক্টর!
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা উপেক্ষা করেই দুই মেয়াদে পূর্ণকালীন দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরেও প্রক্টরের দায়িত্বে রাখা হয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে পাশ কাটিয়ে তাকে দেওয়া হয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।ইউজিসির নির্দেশনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে অমান্য করে তাকে একাধিক দায়িত্বে রাখায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের ২০ মার্চ ইউজিসি থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, '১০ বছরের অধিক বয়সের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চলতি দায়িত্বের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন/প্রবিধান অনুযায়ী স্থায়ী নিয়োগ প্রদান করার অনুরোধ করা হচ্ছে।' অভিযোগ উঠেছে এই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে প্রক্টর হিসেবে দায়িত্বে রেখেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তক্রমে সে বছরের ১৮ জুলাই তারিখ থেকে তাকে দুই বছরের জন্য প্রক্টরের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদ শেষে ২০২০ সালের ১৮ জুলাই থেকে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রক্টরের দায়িত্ব প্রদান করা হলে সেই দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালে ১৭ জুলাই।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের ১৮ জুলাই থেকে চলতি দায়িত্ব হিসেবে পুনরায় তাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ইউজিসির নির্দেশনাকে অমান্য করে তাকে দায়িত্বে রাখায় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একজনকে বারবার দায়িত্বে না রেখে নতুন কাউকে সুযোগ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র শিক্ষক।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে অমান্য করেই একই সাথে ডিন,প্রক্টর এবং বিভাগীয় প্রধানের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রাখা হয়েছে তাকে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধান একই সাথে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন, প্রক্টর ও ইনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৬ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের প্রথম সংবিধির দফা-১৭ (২) তে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল দায়িত্বের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা যাইবে সেই সকল দায়িত্বের মধ্য হইতে একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রদান করা যাইবে না। আইনের সংবিধিতে সুস্পষ্টভাবে এটি বলা থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করেই তাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে ডিন হিসেবে নিয়োগেও রয়েছে জ্যেষ্ঠতার ক্রম না মানার অভিযোগ।গত ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯ তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ পান প্রফেসর ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধান।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৬ এর ২২(৫) ধারায় বলা হয়েছে- 'ভাইস চ্যান্সেলর সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে, প্রত্যেক অনুষদের জন্য উহার বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য হইতে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, পালাক্রমে দুই বৎসর মেয়াদের জন্য ডিন নিয়োগ করিবেন'। কিন্তু এই অনুষদে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে সপ্তম অবস্থানে আছেন অধ্যাপক ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধান। এখানেও আইনের সম্পূর্ণ ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মত দিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সুজন আলী বলেন, একজন ব্যক্তিকে একইসাথে একাধিক দায়িত্ব না দিয়ে দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে বন্টন করা হলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের গতিশীলতা বাড়বে বলে আমি মনে করি।
তবে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ তুহিনুর রহমান(তুহিন অবন্ত)বলেন যে পরিস্থিতিতে তাকে এই দায়িত্বগুলো দেওয়া হয়েছে তাতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে আমার তা মনে হয়না।
ডিন নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুসরণ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কোনো যৌক্তিক কারণ থাকলে জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুসরণ না করা হতেই পারে। এটা আমি খুব বেশি অসামঞ্জস্য মনে করিনা'।
এ বিষয়ে প্রফেসর ড.উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন 'উপাচার্য স্যার বিধির মধ্যে থেকেই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে কোনো বিধির লঙ্ঘন হয়েছে বলে আমি মনে করিনা।'
ডিন নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তক্রমে আমাকে ডিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।'
উপাচার্য প্রফেসর ড.সৌমিত্র শেখরে বলেন, এখানে সিন্ডিকেট যা ভালো মনে করেন তাই। এখানে ভিসি একক ভাবে কিছু করেন না।ভিসি যা করেন সিন্ডিকেটে বিষয় গুলো উপস্থাপন করেন। সিন্ডিকেট চাইলে অনেক কিছু বাতিল করতে পারে।
এএজেড