কৃচ্ছ্রসাধন বিদ্যুতে না শিক্ষাতে!
কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বেশিরভাগ বিভাগে নেওয়া হয় না কোন ক্লাস। যার ফলে বাকি চারদিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়ছে। এছাড়াও অনেক বিভাগে ক্রেডিট ঘন্টা পূরণ করতে না পারায় সেশনজট সৃষ্টি হচ্ছে।
২০ শতাংশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে একদিন স্ব-শরীরে ক্লাস বন্ধ রাখা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন করে লাগানো হয়েছে ৩৬টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি)। প্রশাসনের এমন বিপরীতমুখী সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
২০২২ সালের ২৩শে জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২তম একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংএ সপ্তাহে একদিন (বৃহস্পতিবার) অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের উপর সৃষ্টি হচ্ছে চাপ,
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগের মধ্যে ১০টিতে অনলাইনে কোন ক্লাস রাখা হয়নি। নয়টি বিভাগে ক্লাস রাখা হলেও বেশিরভাগ বিভাগে নেওয়া হয় না।
ক্লাস না রাখার বিষয়ে শিক্ষকরা জানান অন্য চার দিনে ক্লাস নিয়ে ক্রেডিট ঘন্টা পূরণ করতে পারায় অনলাইনে ক্লাস রাখা হয়নি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছে অন্য দিনগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস, প্রেজেন্টেশন ও এসাইনমেন্টের কারণে মানসিক ও শারীরিক চাপ পড়ছে। অনলাইনে ক্লাস থাকলেও না হওয়ার পিছনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনীহা রয়েছে বলে জানা যায়।
অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রেজাউল ইসলাম জানান, 'আমি অনলাইন ক্লাস থেকে স্বশরীরে ক্লাস নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া প্রয়োজন। তা সম্ভব হয় স্বশরীরের ক্লাসে।'
কমছেনা সেশনজট,
এদিকে করোনা মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে আনতে ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর ক্রেডিট ঘন্টা অপরিবর্তিত রেখে ৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাসে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু যথাসময়ে সময়ে কোর্স শেষ করতে না পারায় সেমিস্টার ৬ মাসেই নেওয়া হচ্ছে ১০টির অধিক বিভাগে৷ যার ফলে কমছেনা সেশনজট।
অনলাইনে ক্লাসের বিরোধীতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, 'অনলাইন ক্লাস নিলে আমরা অনেকে ক্লাসে সংযুক্ত হতে পারি না। আবার ক্লাস না নিলেও বাকি দিনগুলোতে একসাথে তিন চারটি ক্লাস দিয়ে রাখা হয়েছে, যা আমাদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। অনলাইন ক্লাসের নামে একটা দিন বেশি বন্ধ রাখা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। কৃচ্ছ্র সাধন বিদ্যুতে না শিক্ষাতে হচ্ছে তা প্রশাসনের ভাবা উচিত।'
বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন একাধিক শিক্ষক। এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, "বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাড়ি ব্যবহার করে অফিসে আসে। বিভিন্ন মিটিং হয় প্রশাসনের। ক্লাস নিতে কি সমস্যা। এমন সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর।"
সপ্তাহে পাঁচদিন স্বশরীরে ক্লাস চালু রাখার জন্য উপাচার্যের প্রতি আহ্বান করে অধ্যাপক ড.মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, "একটা সময় বিদ্যুৎ সংকট ছিলো, লোড শেডিং হতো। কিন্তু এখন কমে এসেছে। তাই আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ করবো ক্লাস যেন সবদিন স্বশরীরে নেওয়া হয়।"
প্রশাসনের বিপরীরমূখী কার্যকলাপ,
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে একদিন অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬ টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টি ২টন (এসির সক্ষমতা পরিমাপের একক) এবং বাকি ৯টি ১ দশমিক ৫ টনের।
এছাড়াও সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ঘুরে দেখা যায় উচ্চ ভোল্টের হিটার, কুকার ও বৈদ্যুতিক ক্যাথলি ব্যবহার করা হচ্ছে বেশিরভাগ রুমে। ডাইনিংয়ে মান সম্মত খাবার ও যথাযথ রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় এসব ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
প্রশাসনের এমন বিপরীতমুখী কার্যকলাপের বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ূন কবিরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। তবে বৃহস্পতিবারে অনলাইনে ক্লাসের বিষয়ে তিনি জানান, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্তটা সঠিক। যদি অনলাইনে ক্লাস না নেওয়া হয় বৃহস্পতিবারে, তাহলে কিভাবে ক্লাস কার্যকর করা যায় তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এএজেড