জবিশিস নির্বাচন: দুই নীল দলেই ফ্যাক্টর সাদা দল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জবিশিস) কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল। নির্বাচনে লড়বে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের দুইটি প্যানেল। দুই নীল দল ব্যতীত অপর তিন দল নির্বাচনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করছেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। বিভক্ত নীল দল দুটিতেই বিনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের অনুপ্রবেশও স্বীকার করেছেন দলটির নেতারা।
পূর্ব নির্ধারিত সময় ও তারিখ অনুযায়ী আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষকরা কয়েকদিন ধরেই প্রচারণা চালাচ্ছেন।নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন জবিশিসের এবারের নির্বাচনে ভোটার হয়েছেন ৬৭৫ জন শিক্ষক ৷ নির্বাচনে ৬টি পদে মোট ৩০ জন পদ প্রত্যাশী শিক্ষক লড়াই করছেন। এদের মধ্যে থেকে ১৫ জন নির্বাচিত হবেন। সদস্যপদে ১০ জন ও বাকি ৫ পদে একজন করে নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ নির্বাহী প্রতিটি পদের বিপরীতে দুই প্যানেল থেকে দুই জন পদপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া, প্রতিটি সদস্য পদের বিপরীতে ২ জন করে মোট ২০ জন শিক্ষক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
শিক্ষক সংগঠনের এই নির্বাচনে নীল দলের (জাকির হোসেন-নাফিস আহমদ) প্যানেল থেকে সভাপতি পদে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান নির্বাচন করছেন। নীল দলের (পরিমল বালা-আনোয়ার হোসেন) প্যানেল থেকে সভাপতি পদে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান ও সাধারণ সম্পাদক পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে বিভক্ত নীলদল পাল্টাপাল্টি নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেছে।
আদর্শ এক হলেও ভিন্ন মতের কারণে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের দু’গ্রুপ পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠন করে। বরাবরের মতো নীলদলের এ বিভক্ততেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্যানেল দুইটি সরাসরি সাবেক উপাচার্যপন্থী ও পরিপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিল। উপাচার্যের পরিবর্তনে রদবদলে দীর্ঘ আট বছর পর সর্বশেষ শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বেও নতুনত্ব আসে। এদিকে নির্বাচনের ১৫ দিন পূর্বে নীলদলের একাংশ ভেঙে গঠিত হয় স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজ নামে নতুন একটি আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন। নির্বাচনে তারা সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও ফলাফলে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা। এদিকে সাদা দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার মধ্যেও রয়েছে নীলদলের বিভক্ত যেকোনো এক অংশের নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা। তবে নীলদলের কোনো অংশই তাদের সদস্যদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানাতে পারেনি।
অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সদস্য সংখ্যা দেড়শোরও অধিক। এবারের নির্বাচনের পূর্বে সাদাদল কমিটি গঠন করলেও ভোটে মনোনয়ন সংগ্রহ করেও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এবং প্রার্থীদের হেনস্তার ভয়ে সরাসরি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। সাদা দলের নতুন কমিটির সদস্যদের ভোটেই নির্বাচনে নেতৃত্ব আসবে বলে জানান দিচ্ছেন সিনিয়র অধ্যাপকরা।
এদিকে সাদা দলের দাবি, তাদের মধ্য থেকে শিক্ষকরা ভাগ হয়ে নীল দলের দুই অংশের মধ্যে মিলে গেছে। এদের ভোটেই নির্বাচনের নেতৃত্ব আসবে বলছেন সাবেক শিক্ষক সমিতির নেতারা। তবে সাদা দলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে মানতে নারাজ নীল দলের উভয় অংশ। একাংশ বলছে তারা আশ্রায়ণে বিশ্বাসী নয়। অপর অংশ বলছে এমন কোনো অভিযোগ আসলে তারা সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও একই পদের প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, আমরা যে ইস্তেহার দিয়েছি, সেগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র সমাজের কল্যাণ হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যদি আরও ভালোর দিকে যায়, তাহলে ছাত্র হিসেবেও সেটা সবার জন্যই গর্বের হবে। আমি চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের যে নির্বাচনী অঙ্গীকার সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে বিশ্বমানের উন্নীত করা প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে ও সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করব।
নীল দলের আরেকাংশের সাবেক সহ-সভাপতি ও এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের থেকে যারা চলে গেছে তাদের কোনো প্রভাব আমাদের নির্বাচনে পড়বে না। তারা নতুন একটি সংগঠনও খুলেছে। আমরা জয়ের প্রত্যাশা নিয়েই নির্বাচন করছি।’
আওয়ামীপন্থী আরেক দল জয় বাংলা শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, করোনা সময়ে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারিনি বলে এবারও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছি না। তবে বর্তমান শিক্ষক সমিতি ভালো কাজ করছে। যারা শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করবে আমরা তাদের সঙ্গেই আছি। তিনি বর্তমান শিক্ষক সমিতির পক্ষেই রয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে দলের এই নেতা ভোট পেয়েছিলেন ১০টি।
এদিকে আওয়ামী পন্থী নতুন দল স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের জন্য ভালো কিছু করতেই সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে একতাবদ্ধ হয়েছি। শুরুতেই আমরা নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছি না। আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেব।’
আট বছর পর কমিটি গঠন করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা নিয়ে সাদাদলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘আমরা প্রথমে মাঠ গুছিয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু ভোটের পরিবেশ আমাদের অনুকূলে না থাকায় এবং আমাদের প্রার্থীরা ভোটে দাঁড়ালে বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়। আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি। আর যে শিক্ষক সমিতি কোনোদিনও শিক্ষকদের কল্যাণে আসেনি সে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন।’
এমএমএ/