বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তনের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাবর্তনের বাকি আর মাত্র ১ দিন। শেষ সময়ে এসেও বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না ৫৩তম সমাবর্তনের। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ১৭১টি স্বর্ণপদক দেওয়া হবে। এই স্বর্ণ পদকগুলো তৈরির পর এর মধ্যে থেকে ৩৫টির পরীক্ষা করালে অধিকাংশের ওজনের মধ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।
ওজনের এই গরমিলের তথ্য গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে। তবে তা সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ৩৫টির মধ্যে মাত্র দুইটি স্বর্ণপদকের সঠিক ওজন পাওয়া গেছে। তবে ২১টিতে চার গ্রামের কম-বেশি এবং বাকিগুলোতে তিন গ্রামের কম স্বর্ণ ছিল।
বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস ছামাদ বলেন, আমরা ৩৫টি স্বর্ণপদক পরীক্ষার জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনে যাই। কিন্তু পরীক্ষার পর আমরা টুকটাক কিছু গরমিল পাই। তবে এটি ব্যালেন্স হয়ে যাবে।
জানা গেছে, স্বর্ণপদক তৈরিতে দায়িত্ব পেয়েছে দাদা মেটাল প্রসেস। এমন ভুল হওয়ার পেছনে সময় স্বল্পতাকে দুষছেন তারা। ওই প্রতিষ্ঠানটির শ্যামল নামের দায়িত্বরত একজন বলেন, আমাদের গত ১৩ তারিখে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে ১৭১টি স্বর্ণপদক কেউ তৈরি করে দিতে পারবে না। বাংলাদেশে এমন কারো জন্ম হয়নি যারা তিন দিনে ১৭১টি স্বর্ণপদক তৈরি করে দিতে পারবে। আমাদের কম সময় দেওয়ার কারণে এই সমস্যা হয়েছে।
স্বর্ণপদকের পদকের ওজন কাণ্ডের আগে টাইয়ে বানান ভুল, পলিথিনে গাউন সরবরাহসহ নানা অভিযোগ তোলে সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। এদিকে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লোগো সম্বলিত গাউন সরবারাহ করা অভিযোগ উঠছে। ঢাকাপ্রকাশ-এর কাছে এমন কিছু ছবি এসেছে।
ইমরান হোসেন সাগর নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “...২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই সরকারি সাত কলেজ বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। সর্বশেষ ৫৩তম সমার্বতনে আগের মতো একই সঙ্গে একই মাঠে অন্য সব অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মতো সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। তাদের আলাদা করে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন মাঠে সমাবর্তনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে ডিজিটার পর্দার মাধ্যমে ঢাবির মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন দেখানো হবে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “বৈষম্যের আরও কিছু দৃশ্য হলো সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দেওয়া গাউনগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের, এমনকি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের গাউন দেওয়ার জন্য ঢাবি সামান্য এটা ব্যাগ দিতে পারেনি, পলিথিন এর ব্যাগে করে দিয়েছে। তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া সমাবর্তনের ফি দিয়ে ঢাবি কী করল?”
এদিকে সমাবর্তন উপলক্ষে গ্র্যাজুয়েটদের দেওয়া টাইয়ে ‘53rd’ এর স্থলে ‘53th’ লেখা ভুলকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ পলিব্যাগে সমাবর্তনের গাউন দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়, বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, টাই তৈরিতে যারা প্রিন্টে ভুল করেছে, আমরা তাদের জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছি। এই উপহার বিদেশিদের কিংবা অতিথিদের দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানহানী হবে। মেহমানদের জন্য নতুন করে তৈরি করে দিতে বলেছি তাদের। সেই সঙ্গে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে টিস্যু ব্যাগ ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এবং সেটি তারা করছে।
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের গ্রাজুয়েটদের ডিজিটাল স্ক্রিনে সমাবর্তন নিতে আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি চ্যান্সেলর যেভাবে নির্দেশনা ও সম্মতি দেন, সেভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করবে। বিষয়টা পুরোপুরি চ্যান্সেলরের উপর নির্ভর করে।
এসএন