জাবিতে উন্নয়নের নামে চলছে অবাধে বৃক্ষ নিধন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রায় এক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। আরও বেশ কিছু গাছ কাটার তোড়জোড় চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দেড় হাজার কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়নের নির্মাণ কাজ চলছে, যার কারণে গাছ কাটা হয়েছে। এদিকে গাছ কেটে অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। তারা বলছেন, গাছ কেটে উন্নয়ন চান না।
জাবির রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ২০১৮ সালে শুরুর পর থেকে এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার গাছ কাটা পড়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও কয়েক শ' গাছ কাটা পড়বে।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্ট এলাকায় দেড়শো’র মতো গাছ কাটা হয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পুরোনো গাছ কাটা রয়েছে। সেখানে কেউ গাছ কেটে ছোট করছেন, কেউ গাছের ডালপালা কেটে ভ্যানে বোঝাই করছেন আবার কেউ গুটি কাটছেন। স্বাধীন মতো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে নির্বিঘ্নে। নেই কারো কোনও মাথা ব্যথা।
গাছ কেটে ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’।
এ ব্যাপারে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘আমরা উন্নয়নের পক্ষে তবে অবশ্যই মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নসহ। পরিকল্পনা ছাড়া যেখানেই ফাঁকা জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন তৈরি করতে চাচ্ছে। হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে কিন্তু হাজার গাছ লাগানোর তো কোনও পরিকল্পনা দেখি না। এভাবে চলতে থাকলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাবে ইট কংক্রিটের নগর। যা পরিবেশের জন্য হুমকি দায়ক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রাণ প্রকৃতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের জন্য রোল মডেল। অতিথি পাখির জন্যও এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রসিদ্ধ। এসব চিন্তা করেই একটা মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা উচিত ছিল যেটা হয়নি। যেখানে ক্লাস রুমের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে সেখানে অপ্রোয়জনীয় ভবন তৈরি করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে প্রাণ-প্রকৃতির তথা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এসআইএইচ
