দুটি বাসে আসা-যাওয়া করবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়
গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
সাভারের মির্জানগরের নলাম এলাকায় আছে বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়’। বিভাগগুলো খুব ভালো, ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলায়ও কৃতি। তবে এদেশের অন্যতম এনজিও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কারোরই কোনো ছাত্র, ছাত্রী পরিবহনের কোনো বাস ছিল না। ফলে বিভিন্ন জায়গাতে, কোনো পত্রিকা বা খবরের কাগজে লিখতে, কাজ করতে গিয়ে তাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। এখনো নেই। কেননা, তাদের কারোরই কোনো হল নেই! তবে আশার কথা হলো, অন্তত পাঁচ হাজার ছাত্র, ছাত্রীর এই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের, যারা স্মৃতিসৌধের কাছেই খুব ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তাদের জন্য দুটি বাস প্রদান করেছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী চিকিৎসা ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা এবং এনজিও ব্যক্তিত্ব ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’।
গতকাল বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মদ মুকাম্মেল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটিতে জানানো হয়েছে-‘ছাত্র, ছাত্রীদের যাতায়াতের ভোগান্তিগুলো দূর করতে বাস সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথম ধাপে মানিকগঞ্জ ও চন্দ্রা রুটে দুইটি বাস সংযুক্ত হলো। ছাত্র, ছাত্রীদের বাসগুলো ব্যবহারের জন্য ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্ব-স্ব বিভাগীয় প্রধানদের কাছে তাদের বাড়ি, ঘরের তথ্য প্রদান করতে হবে।’
প্রথমবারের মতো বাস পেয়ে খুব খুশি সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীরাসহ সবাই। নতুন এই সংযোজন শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আরো সহায়তা করবে বলে আশা করছেন। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরিফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ ছাত্র, ছাত্রী ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে যাতায়াত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস না থাকায় কম, বেশি সবারই ভোগান্তি হয়। বাস সুবিধা চালু হওয়াতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারব। ফলে পড়ালেখায় খুব ভালো প্রভাব পড়বে।’
তবে রাজধানী ঢাকা রুটে কোনো বাস না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন যাতায়াতকারীরা। আইনের প্রথম বর্ষ আরেফিন ফরহাদ বলেছেন, ‘প্রতিদিন ঢাকা, হেমায়েতপুর, সাভার থেকে প্রায় আড়াইশ ছাত্র, ছাত্রী আসা-যাওয়া করি। এই রুটে একটি বাস দেওয়া খুব জরুরী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ইতিবাচকভাবে দেখবে বলে আশা করছি।’
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ এস. তাসাদ্দেক আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের প্রশাসন বাস দিতে আগ্রহী তবে এখনো সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি আসেনি।’
নতুন দুটি বাস নিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, ‘আমাদের ছাত্র, ছাত্রী যারা এই গণ পরিবহন ব্যবহার করবে, তাদের তথ্যগুলো প্রদানের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ছাত্র, ছাত্রীরা একত্রে যাতায়াতের আগ্রহ দেখালে প্রয়োজনে আরো বাস দেওয়া হবে। ভাড়া গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে ধার্য করা হবে। আরো সিদ্ধান্তগুলো আসবে তাদের তথ্যগুলো জানার পর। আমি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অভিনন্দন জানাই।’
এই বিষয়ে সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার আবু মুহাম্মদ মোকাম্মেল বলেছেন ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিআরটিসিসহ আরো কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানির বাস মালিকদের সাথে কথা বলছে। প্রথম দিকে পরীক্ষামূলকভাবে ছাত্র, ছাত্রীদের আমরা এই দুটি ভাড়া বাসে আনা-নেওয়া করব। এরপর ফান্ড পেলে আমরা বাস কিনব। ছাত্র, ছাত্রীদের পক্ষে সবচেয়ে কম ভাড়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আনা, নেওয়া করবে নির্দিষ্ট সময়ান্তর।’
প্রথম বাস পেয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি অত্যন্ত খুশি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মীরা অত্যন্ত কার্যকর এবং নিবেদিতপ্রাণ। তাদের জন্য আলাদা রুম ও আলো এবং কম্পিউটার সুবিধা প্রদান করেছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রশাসন।
সদ্য পাশ করা সমিতির সাবেক সভাপতি অনিক আহমেদ লিখেছেন, “প্রাণের প্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি বাস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত খুশির সংবাদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আজ অন্যতম স্মরণীয় দিন। কর্তৃপক্ষ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা দুটি বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য বাস ও আলাদা হল। গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সামতির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের এই বার্তাগুলো বহুবার প্রশাসনে পৌঁছে দেয়া হয়েছে কিন্তু ভর্তির প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত ‘শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নেই এবং ভবিষ্যতেও করা হবে না’-এ বাক্যের দোহাই দিয়ে তারা কাজে নামেননি। আশ্বাস দিয়ে বারবার বহু প্রত্যাশিত, সময়োপযোগী দাবিগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও বারবার তাদের বলার চেষ্টা করা হয়েছে, বাস ও হলের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে অন্যতম আশঙ্কা ‘শিক্ষার্থী সংকট’ বহুলাংশে কমে যাবে। গত বছর গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের পর তারা বিষয়টি আমলে নেন। ফলশ্রুতিতে দুটি রুটে বাস চালুর সিদ্ধান্ত। ইতিবাচক প্রভাবে বিভিন্ন রটে বাসের সুবিধা আসবে, জানতে পেরেছি। সময়ের সঙ্গে আমাদের ভালোর জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যুক্তিযুক্ত।”
ওএফএস।