এই ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে : ড. মুহাম্মদ সামাদ
১ নভেম্বর, সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) সেজেছিল উৎসবের সাজে। আইআরের তিনতলা পুরোনো ভবনটি আবার রঙে রেঙেছে। তার ভেতরে প্রবেশের সিঁড়িগুলো, যেখানে সব বর্ষের সব ছাত্র, ছাত্রীর বসতে বড় ভালো লাগে, তারা আড্ডা জমান, বসে থাকেন স্টেজে, ক্যান্টিনে আলাপ করেন দলে দলে বা ভাগে ভাগে; সবখানে উৎসবের রঙিন আভা।
সিঁড়িতে বৈশাখের মতো আলপনাগুলো আঁকা, কোনোটি সাদা একটি বিশেষ ফুল, কোনোটি পাতা। আবার কোনোটি নকশা কাটা। এই ভালোবাসার রঙিন ছাপগুলো ছেলেমেয়েদের অনেক শ্রমে গড়া, তাদের মেধা ও কাজের অন্যতম স্বীকৃতি।
স্টেজ, বহু পুরনো, চির নতুন, বড় মমতার, কতকালের আপন-সেখানে সাজানো আছে শোলায় লেখা সাদা-‘শরতের শুভ্রতায়’ একপাশে, অন্যপাশে ‘শ্বেতশুভ্র আটাশ’।
গায়ে তার নানা বৈশাখের কারুকার্য। ওপরে হরিণ, নীচে কাঠের ঘোড়া ইত্যাদি।
হঠাৎ চমকে যাবেন আরে, আইইআরের নির্দিষ্ট সময়ান্তর জেগে ওঠা এই স্টেজে এত চেয়ার কেন? স্টেজ আলোকিত করে বসে আছেন কারা?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক কৃতী অধ্যাপক এবং বিখ্যাত কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল হালিম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান চান, বিশেষ শিক্ষা বিভাগের সাবেক প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান লিটু ও অত্যন্ত শান্ত, ভালোমানুষ ড. অসীম দাস।
তাদের সামনে অনেকগুলো চেয়ারে বসে আছেন অনেকগুলো কচি মুখ, অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র, ছাত্রী। অসাধারণ মেধার তুমুল লড়াইয়ে জিতে তারা এবারের শিক্ষাবর্ষে আইইআরের অনার্স কোসে ২৮তম ব্যাচের ছাত্র, ছাত্রী হয়ে এসেছেন। আগামী ৫টি বছর আইইআর থাকবে ভবিষ্যতের এই শিক্ষাবিদদের দখলে।
আলোচনার পর্বে অসাধারণ বক্তৃতা করেছেন প্রধান অতিথি-কৃতী অধ্যাপক ও প্রশাসক এবং উপ-উপাচার্য কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, ‘আমাদের এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রজন্মের ছাত্র, ছাত্রীদের চিন্তাশক্তি, তারুণ্য এবং বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ। কেশে আমার পাক ধরেছে বটে তোমাদের দেখে আজও ভালো লাগে। মন নাচে।
তোমরা আজকে যারা এখানে উপস্থিত হয়েছো, লেখাপড়া শিখে, কাজে, কর্মে এই বাংলাদেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে, পরিবারের ও মানুষের সেবা করবে-এই আমাদের সবার চাওয়া।
আজকে তোমাদের আমরা অভিবাদন জানাই এই ক্যাম্পাসে-যেটি এই বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও প্রধানতম।
ধারাবাহিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের অঞ্চলের মানুষের প্রধান বিদ্যাপীঠ হিসেবে কাজ করে চলেছে। এখানে বিদ্যার্জন অত্যন্ত দুর্লভ ও সুলভমূল্যের।
আমরা চাই, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যার্জন ও প্রদানের মাধ্যমে গবেষণা কর্মে আরো আত্মনিয়োগ করবে। নিজেদের পেটেন্ট থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রসরতার আরো বিকাশ ঘটবে তোমাদের মতো নবীনপ্রাণদের মেধাবী আগমনে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানে বিকশিত হয়ে তোমরা জীবনে চলার পথেও যুক্তির চর্চা করবে। না হলে আমাদেরও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
বাঙালির যে দর্শন-বেশি চায় না, আমাদেরও তাই-‘চাই না গো মা রাজা হতে, পারি যেন দুবেলা খেতে।’ এই আত্মদর্শনের বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে বাংলাদেশের সেরা মেধাবীরা পড়েন ও পড়ান, গবেষণা করেন; এই মাতার আমি এবং আমরা মাতৃবন্দনা করি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এই ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।
তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, এখন মানুষ জ্ঞানী না হলে চাঁড়াল হচ্ছে। প্রজ্ঞাবান না হয়ে বিশিষ্ট হচ্ছে। সেসব কর্মে যাওয়া যাবে না মোটেও। আমাদের জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবানের প্রচেষ্টায় রত হতে হবে।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি-আমাদের চরিত্র হলো এমন, ‘আমি ভালোবেসে বোকা থাকতে চাই।’ ফলে তোমাদের বিদ্যার্জন মানুষের সেবায় নিবেদিত হবে।
আগে ধর্মের মধ্যে সব জ্ঞান ছিল। মানুষ বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে বিদ্যার্জনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে দিলো।
বিশ্বের সব শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ডায়লগ বা সংলাপের ভিত্তিতেই রচিত হয়েছে। ফলে শিক্ষকদের কথা মনোযোগ দিয়ে ক্লাসরুমে শুনবে, নোট করবে, তাদের কথা অনুসারে চলবে এবং তাদের আদর্শে জীবনকে বিকশিত করবে।
জ্ঞান অর্জন করলে যেকোনো মানুষ সম্মানিত হন আর জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারলে অধিক সম্মানিত হন। ফলে ভালোভাবে পড়ালেখা ও জ্ঞানার্জনের কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের বিদ্যা, জ্ঞান ও অর্জন বহু মানুষের বহু ধরণের ত্যাগ, তিতীক্ষার বিনিময়ে আজকের পর্যায়ে এসেছে। ফলে এই জ্ঞানের ভুবনে তোমাদের সবাইকে আমরা স্বাগত জানাই।”