ব্যক্তিগত আক্রোশে দুই ছাত্রকে মাস্টার্সের দুই সেমিস্টার বহিষ্কারের অভিযোগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)’র সদ্য সাবেক প্রক্টর ও আইন অনুষদের ডিন ড. এম. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে দীর্ঘ ৭ মাস পর অসদুপায় অবলম্বন দেখিয়ে তার বিভাগের দুই ছাত্রকে বহিষ্কারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আক্রোশের মাধ্যমে বহিষ্কারের অভিযোগ করা ছাত্ররা হলেন-মাস্টার্সের এম. সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লা।
লিখিত অভিযোগপত্রে তারা জানান, “২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আমাদের ফলাফল ‘অকৃতকার্য’ দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগে যোগাযোগ করা হলে অফিসিয়ালি কোনো উত্তর দেওয়া হয়নি। ২৮ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে চলমান সেমিস্টারের বহিষ্কার আদেশের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণভাবে আইন বহির্ভূত ও আমাদের প্রতি অবিচার।”
বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়ে তারা বলেছেন, ‘আমাদের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে রুমে আমাদের বা অন্য কারো বহিষ্কারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা সকলে নির্ধারিত আসনে বসে পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষক শিক্ষক উপস্থিত থাকা অবস্থায় কারো খাতা দেখে লেখা সম্ভব নয়। পরীক্ষক কখনো এরকম অপ্রীতিকর অবস্থা কোনো পরীক্ষায় দেখেননি। দীর্ঘ ৭ মাস পর প্রকাশিত ফলাফলে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বহিষ্কার আইনসিদ্ধ নয়। এ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশের বহি:প্রকাশ। যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে দ্রুত আমাদের ফলাফল প্রকাশ করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
এই বিষয়ে অভিযোগকারী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী এম. সাদিদ বলেছেন, ‘আমার অভিযোগ মূলত আমাদের ডিন মহোদয় ড. এম. রাজিউর রহমানের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলছেন, তারা এই বিষয়ে কোনোকিছু জানতেন না। মাত্র একদিন আগে বিষয়টি বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়েছে। ড. রাজিউর রহমান স্যার যেহেতু শৃঙ্খলা বোর্ডের অন্যতম সদস্য, তিনি ৭ মাস পর গঠিত বোর্ডে আমাদের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য দপ্তর, উপ-রেজিস্ট্রার দপ্তর, শিক্ষক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে এ বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতি দেখতে পাইনি।’
এম. সাদিদ বলেন, “আমাদের আইন বিভাগের সঙ্গে আমাকে বহিষ্কারের বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে বলেছেন, ‘তুমি দোষ স্বীকার করে নাও। তোমাকে আমরা ক্ষমা করব।’ কিন্তু আমার প্রশ্ন আমি কী দোষ করেছি যে, দোষ স্বীকার করব? পরীক্ষার হলে কোনো ধরণের অসৎ উপায় অবলম্বন করিনি। আমাকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশে পরীক্ষা সমাপ্তের ৭ মাস পর মিথ্যা অভিযোগে আইন বহির্ভূতভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি বিচার চাই এবং আরো চাই, কোনো শিক্ষকের ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার যেন আর কোনো শিক্ষার্থী না হন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি মানসুরা খানম বলেছেন, ‘পরীক্ষার সময় তাদের বহিষ্কার করা হয়নি। কারণ তখন আমরা কেউ তাদের কারো অপরাধটি দেখিনি। যখন তাদের খাতা এক্সামিন করা হয়েছে, তখন একটি খাতায় দুজনের লেখার শতভাগ মিল পাওয়া গিয়েছে। তারপর তাদের অন্যান্য খাতাগুলো আমরা দেখেছি। ৩টি খাতাতে প্রায় শতভাগ মিল। এমন তো স্বাভাবিকভাবে কখনো হয় না। শিক্ষক-ছাত্ররা সবাই জানি। আমাদের বিভাগের কাছে মনে হয়েছে, তাদের উত্তরপত্র নৈতিকতাবিরোধী। সে মোতাবেক আমরা শৃঙ্খলা বোর্ডে তা পাঠিয়েছি।’
অধ্যাপক মনসুরা খানম আরো জানিয়েছেন, ‘এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডের বহিষ্কার করার ক্ষমতা আছে। তবে আমাদের তরফ থেকে দুটি সেমিস্টার বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়নি।’
মাস্টার্সের এম. সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লা দুই ছাত্রকে বহিষ্কারের বিষয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘৭ মাস আগে মানে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা দুইজন শিক্ষার্থীর সেমিস্টারের মোট ১০টি খাতা ও তাদের বহিষ্কারের সুপারিশের রেজ্যুলেশনের কপি এবং চিঠি তাদের আইন বিভাগ থেকে জমা দিয়েছে। দায়িত্ব অনুযায়ী শৃঙ্খলা বোর্ডকে বিষয়টি আমি অবগত করেছি মাত্র। এরপর বোর্ডের মিটিংয়ে আইন বিভাগের ডিন ড. রাজিউর রহমান বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি দুজনের খাতায় হুবহু মিল পাওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের দুই সেমিস্টার বহিষ্কারের সুপারিশ করেছেন।”
উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম আরও জানান, ‘অকৃতকার্য শিক্ষার্থী এম. সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লাকে বহিষ্কারের চিঠি প্রেরণের সময় আমি দেখতে পাই, তাদের দুই সেমিস্টারই বহিষ্কার করা হয়েছে। তখন তাদের মাত্র একটি সেমিস্টার বাকি ছিল।’
মিকাইল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এ ধরনের বহিষ্কার প্রদানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই।’
মাস্টার্সের এম. সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লাকে বহিষ্কার করা তাদের ডিন ড. রাজিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘তারা যেন ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া সেমিস্টারে যাতে অংশ না নিতে পারে সেজন্য দুটি সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছে।’
মাস্টার্সের এম. সাদিদ ও আবদুল্লাহ মোল্লাকে বহিষ্কার করা বিষয়ে উপাচার্য ড. এ.কিউ.এম. মাহবুব বলেছেন, “ওদের সাথে আলাপ হয়েছে। পরে আলোচনা হবে। এখন নয়। আমি ক্যাম্পাসে আসি তারপর আলোচনা করব।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মিল্টন শেখের করা 'ল' পাশ কোর্সে নম্বর টেম্পারিং, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র সরবরাহসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে আইন বিভাগের ডিন ড. রাজিউর রহমান ও সভাপতি মানসুরা খানমের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি তিন বছর পার হলেও রিপোর্ট প্রদান করেনি।
ছবি : অভিযুক্ত আইন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. এম. রাজিউর রহমান।
ওএফএস।