রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব আসছে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনে ১২ নভেম্বর।
সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা হয় ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বরে।
একই কমিটি প্রায় ছয় বছর দায়িত্বে থাকার পর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত রোববার পদপ্রত্যাশী সবার জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি।
সেদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেতৃত্বে আসতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়, ঝাঁপ শুরু করেছেন আগ্রহী ছাত্রলীগ নেতারা।
ক্যাম্পাসে নিয়মিত শোডাউনও দিচ্ছেন এই পদপ্রত্যাশীরা।
ফলে সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বে আসতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কজন ছাত্রলীগ নেতার নাম এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে ক্লিন ইমেজধারী, সৎ, যোগ্য এবং নেতৃত্বদানে ক্ষমতাসম্পন্ন পদপ্রত্যাশীদের দায়িত্ব দেওয়া হবে নাকি অর্থের বিনিময়ে নেতৃত্বে চলে আসবেন ড্রপ-আউট, অ-ছাত্র, বিবাহিত, দুর্নীতিবাজ, ভর্তি বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য এবং চাঁদাবাজিতে জড়িতরা-সেসব নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
বরাবরের মতো এবারও কি স্থানীয়রাই আসবেন দায়িত্বে? নাকি বাইরেরও কাউকে নিয়ে আসা হবে-ক্যাম্পাসের সর্বত্র এসব নিয়েও চলছে আলোচনা।
সবকিছু ছাপিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন-সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নেতৃত্বে আসার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান ছয় বছরের কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার (ডন), সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু, মেহেদী হাসান মিশু, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয় ও কার্যনির্বাহী সদস্য আল-মুক্তাদির তরঙ্গ।
আলোচনায় রয়েছেন আরও অনেকে।
তবে আলোচিত পদপ্রত্যাশীদের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ-আউট, অ-ছাত্র। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালগুলোর মধ্যে গুরুত্ব এই শাখায় সৎ, যোগ্য, দক্ষ, নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার থাকবেন-এমন নেতৃত্ব চান ছাত্রলীগের নেতা, কর্মীরা। পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় ও বাইরের যোগ্য পদপ্রত্যাশীদের সম্মিলিত নেতৃত্ব দেখতে চান তারা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, ‘দক্ষ সংগঠক, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী,স্বচ্ছ ও আমাদের সংগঠনের বয়সসীমার মধ্যে থাকা ব্যক্তিরা (ছাত্র?) নেতৃত্বে আসুক।’ শীর্ষ দুই পদে দুটি ভিন্ন জেলার নেতৃত্বের আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের মাঝে যাদের ভালো ইমেজ আছে ও কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে যারা সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন, তারা নেতৃত্বে আসুন।’
এই বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের সম্প্রতি কর্মকান্ডে আমি খুব একটা সন্তুষ্ট না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠনে যারা থাকে, সাধারণত তাদের তো দুনীর্তিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা না। তবে যারা এসব করেছে, তারা হয়ত কখনোই আদর্শগতভাবে ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত ছিল না অথবা কারোর মাধ্যমে এমনটি হয়ে গেছে। এসব নেতা, কর্মীদের তো চিন্তাই থাকবে দল থেকে সুবিধা নেওয়া এবং সেসবই তারা করছে।’
অধ্যাপক ড. আশরাফুল ইসলাম খান আরো বলেন, ‘আমি চাই যারা সত্যিকার অর্থেই দলের আদর্শ ধারণ ও লালন করে, তারাই নেতৃত্বে আসুক। এতে দলের ভালো হবে, দেশও উপকৃত হবে। এরা তো আসলে দেশবিরোধী চক্র না। ছাত্রলীগ ভালো কাজ করলে দেশেরই মানুষের কাজে লাগবে।’
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আফি আজাদ বান্টি বলেছেন, ‘ব্যক্তির দায় কখনও ছাত্রলীগ নেয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ভর্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অবগত। এবার পদপ্রত্যাশীদের কেউ যদি অপ্রীতিকর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে আর তার প্রমাণ মেলে, তাহলে অবশ্যই তাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে না। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা সৎ, যোগ্য ও দক্ষদেরই নেতৃত্বে নিয়ে আসব। স্থানীয় হোক বা রাজশাহীর বাইরের হোক, যারা যোগ্য তারাই নেতৃত্বে আসবে।’
লেখা ও ছবি : আসিফ আহমেদ দিগন্ত।
ওএফএস।