৯ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বষের ছাত্র মো. গোলাম মোস্তাকিম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালে অবহেলা, ছাত্রদের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হামলা ও মামলার প্রতিবাদে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলার কারণে শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা হামলা করেছেন, আবার মামলাও করেছেন। এসব মেনে নেওয়া যায় না।’
তারা আরও বলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
এ সময় তারা তাদের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবি পেশ করেন।
তাদের দাবিগুলো হলো-
১. শাহরিয়ারের মৃতদেহের পাশে অবস্থানকালে তার সহপাঠীদের ওপর নৃশংস হামলা হত্যাচেষ্টা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আনসারদের অতি দ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের প্রত্যেককেই তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. রামেকের ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামীম ইয়াজদানীর অসংলগ্ন আচরণ ও প্রত্যক্ষ মদদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। কুখ্যাত এই পরিচালকের অপসারণ করতে হবে।
৩. রামেকের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে ফর্মালিটিজের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে।
৪. রামেকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ডাক্তারদের দোষ ওয়ার্ডবয়দের ওপর, ওয়ার্ডবয়দের দোষ ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি আর চলবে না।
৫. ইন্টার্ন ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অভিযোগ জানাতে গেলে অভিভাবকদের ওপর অস্ত্রোপাচার সামগ্রী দিয়ে আক্রমণের বদভ্যাস পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি মানবিক ও আন্তরিক হতে হবে।
৬. জরুরি বিভাগে সিনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ডাক্তারদের দায়িত্ব চলাকালীন নার্স, ওয়ার্ডবয় দিয়ে প্রক্সি দেওয়ানো চলবে না।
৮. আইসিইউ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের সিগনেচারের নামে টালবাহানা করে যে কালক্ষেপণ করা হলো তা দ্বিতীয় কারও সঙ্গে করা হবে না- এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৯. অনতিবিলম্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে। রামেকের ডাক্তার-নার্সরা মনগড়া, বানোয়াট, কাল্পনিক, অসত্য যে ঘটনা সাজিয়েছেন, তার চিত্রপ্রকাশ করে সবাইকে প্রকৃত সত্য ঘটনা জানার সুযোগ করে দিতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অবহেলার কারণে আমরা আর কোনো শহরিয়ারকে হারাতে চাই না। আর কোনো ভাইকে অকালে চলে যেতে দিতে পারি না। কোনো বাবার স্বপ্ন ভেঙে যেতে দিতে পারি না।’ চিকিৎসকদের উদ্দেশে তারা বলেন, ‘আপনাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ধামাচাপা দেয়া জন্য একের পর এক নাটক সাজান। আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করেন, আপনাদের বিবেক লজ্জা পেয়ে যাবে।’
মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল বের হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক দিয়ে কাজলা গেট হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, ‘আমরা চাই সেদিন রাতের সত্য ঘটনাটা বেড়িয়ে আসুক। সেই দিন আমাদের ছাত্রদের উপর যে হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমাদের ছাত্রদের দাবি দাওয়ার সাথে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের দাবি-দাওয়াগুলো প্রতিষ্ঠিত হোক।’
মানববন্ধনে মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি ও ব্যবসা অনুষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমার ছাত্র শাহরিয়ারের চিকিৎসায় সময়ক্ষেপণ, ছাত্রদের উপর হামলা, মিথ্যামামলা দেয়া ও শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমি ছাত্রদের সাথে আছি। তাদের দাবি এখন আমাদেরও দাবি।’
প্রসঙ্গত, মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র এবং শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র শাহরিয়ার গত ১৯ অক্টোবর হলের তৃতীয় তলার ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাহরিয়ারকে হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রেরণ করেন। সেখানে তার অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গুরুতর আহত শাহরিয়ারকে রামেকে নেওয়ার পর তাকে আইসিইউতে না নিয়ে চিকিৎসার জন্য ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক ও নার্স নানা অযুহাতে চিকিৎসা প্রদানে কালক্ষেপণ করতে থাকে। ফলে বিনা চিকিৎসায় শাহরিয়ারের মৃত্যু হয়েছে। ৩৫ মিনিট পর বিনা চিকিৎসায় আহত শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের সামনে ও পরিচালক কক্ষের সামনে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় ইন্টার্ন চিকিৎসক, হাসপাতাল স্টাফরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান বলে তাদের অভিযোগ।
হামলায় পাঁচজন ছাত্র আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
একজনের মাথা ফেটে গেছে ও আরেকজনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
ইটার্ন চিকিৎসকদের দাবি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছে।
ওএফএস।