ঢাবিতে গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা শুরু, ব্যানারে ভুল বানান সংশোধন
প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা শুরু হয়েছে। শনিবার (২২ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে রবিবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত।
শনিবার (২২ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অনুষ্ঠান উদ্বোধনী ঘোষণার আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সংগীত বিভাগের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত ও শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিম সংগীত পরিবেশিত হয়।
একাডেমিয়া ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রকাশনা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষে এ মেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বলে জানান উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এ ছাড়া, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সহ, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর বছর পূর্তিতে আমরা অনেক গবেষণা পরিচালনা করেছি। অনেক শিক্ষকই গবেষণা কর্ম সম্পন্ন করেছেন, জার্নালে বিশেষ ইস্যু বের হয়েছে। সবগুলো কমপাইল করে আজকের এ গবেষণা মেলা।
শিক্ষক হিসেবে আমাদের যেটি কাজ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা, আর এ শিক্ষাদানের পেছনে রয়েছে নতুন নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন করা। যেটি সম্ভব হয় গবেষণার মাধ্যমে। গেল কয়েক বছর ধরে আমরা নানানভাবে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তরুণ গবেষকেরাও অনেক অনুপ্রাণিত হবেন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বাজেটের মধ্যে গবেষণা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা মোট বাজেট ১.৬৩ শতাংশ। যা দিয়ে বড় ধরনের গবেষণা করা সম্ভব হয় না। দেশের স্বার্থে উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১ বাস্তবায়নে যেসব গবেষণাগুলো প্রয়োজন, সেসব গবেষণাগুলোতে সরকার বিশেষ অর্থায়নের ব্যবস্থা করবেন বলে আশা করি। গবেষণার মাধ্যমে লব্ধকৃত জ্ঞানগুলো ইন্ডাস্ট্রি ও কর্পোরেট হাউসগুলো ব্যবহার করবে তাতে দেশটি এগিয়ে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতি গঠনে যেমনটা ভূমিকা রেখেছে, তেমনি জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রচার ও প্রসারে জাতিযে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটি এ মেলায় প্রতিফলিত হবে। আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার আগে গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। যদি গবেষণা না হয় শিক্ষায় নতুন জ্ঞান আসবে না। তা ছাড়া, জাতি, সমাজ ও কর্পোরেট সেক্টরগুলোকে সমৃদ্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাজ করতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতি গঠন ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেন অবদান রাখতে পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি যদি কোলাবরেশন না থাকে বিশ্ববিদ্যালয় এগোতে পারে না। দক্ষিণ কোরিয়াতে জিডিপির ৪.৫ শতাংশ গবেষণাক্ষেত্র ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হয়। উন্নয়ন নির্ভর করে গবেষণার উপর। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা সেটি এখনও নিশ্চিত করতে পারি নি। আমরা অনেক টাকা খরচ করে বহিরের দেশের লোকবল এনে দেশে ইটিপি (শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত তরলবর্জ্য পরিশোধন করার জন্য শোধনাগার) স্থাপন করেছি। তারপরেও কেন যেন সেটি খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি। দেশের প্রত্যেকটি উন্নয়নে আমরা যদি দেশি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক-গবেষকদের ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ বলেন, বিজ্ঞান-কলা-সামাজিক বিজ্ঞান সমস্ত ক্ষেত্রে গবেষণার মধ্য দিয়ে সমাজ ও সভ্যতা কে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তেমনও বিজ্ঞানের একটি উল্টোদিকে রয়েছে সেটি হল যুদ্ধ। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রকাশনার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সম্পর্ক স্থাপন এবং প্রকাশনা, গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সামাজিক চাহিদা নিরূপণ, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের ক্ষেত্রে এই মেলা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালুর উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা আরও সহজ করা দরকার।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপি প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান প্রজনকে সুদক্ষ কর্মীবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করতে হবে। গবেষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি শিল্প মালিক ও অ্যালামনাইদের প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, কর্মদক্ষ ও যুগোপযোগী অ্যাজুয়েট তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ফান্ড প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি।
উদ্বোধন শেষে অতিথিরা মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
উদ্বোধনী দিনে বিকেল ৩টায় কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পৃথক উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী দিনে সকাল ১০টায় জীববিজ্ঞান অনুষদ, ফার্মেসী অনুষদ, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদ এবং চারুকলা অনুষদের পৃথক উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া, সকল ইনস্টিটিউটের পক্ষে ১টি এবং গবেষণা কেন্দ্র/ব্যুরো'র পক্ষে ১টি উপস্থাপনা থাকবে। বিকেল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত কবিতা, রচনা ও ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং প্রত্যেক জার্নালের বিশেষ সংখ্যার শ্রেষ্ঠ আর্টিক্যাল লেখককে সনদ, ক্রেস্ট ও প্রাইজ মানি প্রদান করা হবে। এছাড়া, প্রত্যেক অনুষদ, ইনস্টিটিউট এবং সেন্টারের পোস্টার সমূহ থেকে নির্বাচিত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পোস্টার উপস্থাপনকারীকেও পুরস্কার দেওয়া হবে। দু’দিনব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশ হওয়া প্রকাশনাসহ ৫৫টি গ্রন্থ, ২৬টি বিশেষ জার্নাল, ২১৬টি গবেষণা প্রতিবেদন, ৬২৪টি পোস্টার এবং ৮৬টি ফ্লাইয়ার বা ব্রুশিয়ার। মেলায় একটি কেন্দ্রীয় মঞ্চের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন অনুষদের ১০টি ও ইনস্টিটিউটের একটি প্যাভিলিয়ন। এতে ৮৩ বিভাগ এবং ১২ ইনস্টিটিউটের স্বতন্ত্র স্টল রয়েছে। প্রকাশনা সংস্থার একটি এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলোর জন্য একটিসহ ১৩টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।
বানান ভুল, সমালোচনার মুখে পরিবর্তন: গবেষণা মেলার প্যান্ডেলের ব্যানারেই ‘গবেষণা’ বানান ভুল ছিল। গবেষণার পরিবর্তে ব্যানারে লেখা হয় ‘গবেষনা’। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে কর্তৃপক্ষ বানানটি ঠিক করে। তবে ঠিক করলেও তা আলতো কাগজে লিখা। এ মেলার মূল মঞ্চের ব্যানারে লেখা ছিল ‘গবেষনা ও প্রকাশনা মেলা-২০২২’। গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই স্থান পরিদর্শনে গেলে বানানটি ভুল দেখতে পান। পরে রাতেই ব্যানারের বানান পরিবর্তন করেন আয়োজকরা। মেলার সমম্বয়ক ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স অনুষদের ডিন মো. জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বানানটি ভুল ছিল। পরে ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
এমএমএ/