আত্মহত্যা প্রতিরোধের নাটক ‘সাইক্লোসিস’, মাতিয়ে দিলো কলকাতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ‘বিভাবন থিয়েটার একাডেমি’র আমন্ত্রণে গিয়েছিলের তারা। ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ। সেখানে ১১ থেকে ১৪ অক্টোবর চারদিনের নাট্যোৎসবে দেশের একমাত্র নাটকের দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। উৎসবের নাম ছিল ‘ন্যাশনাল ইন্টিমেট থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল’। ১৪ অক্টোবর শেষ দিনে থিয়েটার এপেক্স মিলনায়তনে প্রদর্শন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রযোজনা ‘সাইক্লোসিস’। মানে হলো মনের রোগ, মনোব্যাধি বা মনোরোগ। এই নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হীরক মুশফিক। ত জানিয়েছেন, ‘আত্মহত্যা না করতে ছাত্র, ছাত্রীসহ মানুষকে উদ্দীপ্ত করতে নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছি আমি।’ এমন ভিন্ন ধরণের ও তরুণ-মেধাবী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দারুণ প্রযোজনা প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শকদের।
প্রদর্শনী শেষে ভারতের জনপ্রিয় নাট্যপত্রিকা ‘ভাবনা থিয়েটার’র সম্পাদক, বিশিষ্ট নাট্যসমালোচক ও অভিনেতা অভিক ভট্টাচার্য্য বলেছেন “বাংলাদেশের ‘সাইকোসিস’ নাটকে ভীষণ রকমের ট্রাস্ট রয়েছে। নাটককে ভাঙা-গড়া হয়েছে হয়েছে বারবার চিত্রনাট্য ও অভিনয়ে। আমরা যারা দর্শক আসনে বসেছিলাম-আমাদের সবাইকেই প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। ‘সাইক্লোসিস’ পুরোটাই এক ধরনের মনস্তাত্বিক খেলা। থিয়েটারে হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে আমার মনে হয়েছে।”
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের প্রধান শান্তনু দাস বলেছেন "সাইক্লোসিস’ এমন একটি নাটক-দেখার পর দর্শককে কিছুক্ষণ ভাবনায় বসে থাকতে হয়। কনটেন্টও অত্যন্ত চমৎকার। বাংলাদেশের বিদ্রোহী ও জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম ভালো আরো নাটক দেখার প্রত্যাশা রইল।”
নাট্যোৎসবের আয়োজক সুপ্রিয় সমাজদার জাানিয়েছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটকটি আমার খুব ভালো লেগেছে। আমাদের বিভাবনের মাধ্যমে যে নতুন সম্পর্কটি তৈরি হয়েছে দুদেশে নাটকের, আরো শক্ত হতে পারে বলে আমি মনে করি।’
সাইকোসিসের রচয়িতা ও নির্দেশক হীরক মুশফিক বলেছেন, “দর্শককে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে অন্তরঙ্গ নাট্য আঙ্গিকে অভিনেতা ও দর্শকের সংযোগ তৈরির মাধ্যমে নাট্যঘটনাকে সাধারণভাবে উপস্থাপন করেছি নির্মাণ প্রক্রিয়ায়। আত্মহনন প্রতিরোধে আমার ‘সাইক্লোসিস’ সামান্য হলেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।’
নাট্যকার আরো জানান, ‘আমাদের প্রদর্শনী, কলা-কুশলীদের কাজ দেখার পর দর্শক এবং বোদ্ধাদের কাছ থেকে যেসব ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, নিজের দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও আমার বিভাগের জন্য গর্ব হচ্ছে।’
জানিয়েছেন, ‘এমন একটি ভিন্নধর্মী উৎসবে অংশগ্রহণ আমাদের জন্য আনকোরা অভিজ্ঞতা।’
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে এ দেশের বেশ কিছু নাটক দেখেছি। আমাদের প্রদর্শনীর মাধ্যমেও মনে হয়েছে সবার-নাটক নিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে ভাবা, নতুন উদ্যমে কাজ করার দায় বেড়েছে।’
'সাইক্লোসিস’ প্রযোজনার সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলার কৃতি অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
'সাইক্লোসিস’-এ অভিনয় করেছেন-হুমায়রা কচি, হুমায়ুন কবীর, কুশ সাহা ও ফারহান।
নাটকের আবহ সঙ্গীত করেছেন রিয়াদ হাসান।
কস্টিউম ডিজাইন করেছেন নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মেহেদী তানজীর।
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান।