জবি ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাবের অভিযোগ তুলেছেন একই শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আমার অপরাধ ছিল আমি তার কুপ্রস্তাব মেনে নেইনি। ভেঙ্গে গেল ৭ বছরের ভাই-বোনের সম্পর্ক। একমাত্র ছাত্রী হলে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ মেয়ে হলে সিট পেলেও আমাকে সে হলে উঠতে দেয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেওয়ার পর নিজের টাইমলাইনে এক পোস্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন এই নারী নেত্রী।
ফৌজিয়া জাফরিন লিখেন, 'আমার জন্য তার অনেক বড় ভাইরা বললেও সে তার কানে তোলেনি কারণ তার তো আর আমাকে প্রয়োজন নেই কর্মী হিসেবে। এখন সে নেতা তার প্রয়োজন মেটাতে পারলেই কেবল সে প্রয়োজনবোধ করবেন। বাংলাদেশের এমন কোনও হল আছে কি যেখানে কোনও গেস্ট গিয়ে একদিন থাকতে পারে না কিন্তু এই আমি প্রিয়ন্তী হলে একদিন গিয়েছিলাম দেখতে হলে থাকার কেমন অনুভূতি। এই আকতার জানতে পেরে প্রভোস্ট ম্যামকে চাপ দিয়ে সেই রাতেই আমাকে হল থেকে বের হতে বাধ্য করে। আমার কি অপরাধ ছিল...?১৪ সাল থেকে প্রতিদিন আট-দশ ঘণ্টা ইভেন আরো বেশি পরিশ্রম করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কমিটিতে এসেছি আমাকে হলে উঠতে দেওয়া হয়নি। এর পিছনের প্রধান কারণ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার। আমার দীর্ঘ আরাধ্য ও প্রতীক্ষার হল থেকে আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করছে।'
প্রিয়ন্তী বলেন, 'দীর্ঘ ৭ বছর তার পিছনে হেঁটেছি,আপনি তার কয় দিনের কর্মী সেটা আগে ভাবুন। আমার মাদারীপুরের তিনজন ক্যান্ডিডেট ছিল কিন্তু তার মধ্যে থেকে তাকে বেছে নিয়েছিলাম নেতা হিসেবে বাকি দুজন ভাই সেজন্য আমার প্রতি অনেক মনঃখুন্ন ছিলেন। কিন্তু আমি আমার জায়গায় অবিচল ছিলাম কারণ রাজনীতিতে জায়গা পাল্টানো শিখিনি। রাব্বানী ভাই সাবেক হওয়ার পরে এই লোককে আমি আমার এলাকায় নিয়ে গিয়ে আমাদের মেয়রের সঙ্গে সর্বপ্রথম আমিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। আমার রাজনৈতিক যত ভাই ছিল সবার কাছে বলছি আমি ভাইয়ের সাথে রাজনীতি করি,আপনারা একটু দেখবেন ভাইয়ের বিষয়টা।
মাদারীপুর থেকে নেতা হলে মাদারীপুরের ছোট ভাইরা ভালো থাকবে আর এমন কত কিছু করছি, যা সেগুলো লিখে বলা সম্ভব না। আল্লাহ মনের আশা পূরণ করল কিন্তু তারপর থেকে আকতার ভাইয়ের আসল রূপ বের হতে থাকল। লেখক দাদার বাসা থেকে যেদিন ফুল দিয়ে নিচে নামলাম তার সঙ্গে সেদিন সেই সকল পোস্টেড নেতার সামনে বসে আমাকে আর জিনিয়া আফ্রিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন কোন হাই কমান্ডের ফোনে সে হল কমিটি দিবে না দরকার হয় সে সাবেক হয়ে যাবে সে নেতা হয়ে গেছে। তার নামের আগে সাবেক লেখা থাকবে তার সমস্যা নেই। আগে তার কর্মী হতে হবে তাকে নেতা মেনে ধারণ করতে হবে তবেই সেই হলের নেত্রী বানাবে। আমরা অবাক হয়ে রইলাম হলের কথা কই থেকে আসল নেতা হলো ১০ দিন মাত্র তখন। সেদিনের পর থেকে তার বিভিন্ন আবদার রাখতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার সঙ্গে আমার দীর্ঘ ৭ বছরের রাজনীতিকে সে মুহূর্তেই অস্বীকার করেছেন,এমনকি সে আমার ছোট বোনদের বলে দিয়েছেন আমাকে সালাম দিলে পদ পাবে না তারা।'
এ বিষয়ে ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী বলেন, 'কুপ্রস্তাব বলতে সে যা বুঝাইতে চাইছে তার মতো করে চলতে হবে। তার মতো করে চলতে হবে বলতে সে বুঝাইছে সে যেখানে যেতে বলবে সেখানে যেতে হবে, যা করতে বলবে তা করতে হবে। আমিতো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম কোনো কিছুই বাদ দিতাম না। কিন্তু এর বাইরে সে কি বুঝাইছে আশা করি আপনাদের এটা আর ডিটেইলস এ বলতে হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'পোস্ট দেওয়ার পর তিনি (আকতার হোসাইন) আমাকে কল দিয়ে বলেন যা করলি অনেক ভালো করলি। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেননি তখন তিনি বলেন হ্যা আমি অন্যায় করেছি কিন্তু তুই এটা আমার এই সময়ে তুলে না ধরলেও পারতি।'
এদিকে এ পোস্ট দেওয়ার পর বিভিন্ন চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানান এই নেত্রী। পোস্টের লিংক কপি করে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেন আকতার হোসাইনের অনুসারী মিরাজ হোসেন এবং তার শেখানো লাইনগুলোই কর্মীরা অনুসরণ করে পোস্টে কমেন্ট করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি কেটে দেন।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার (১ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের 'সুপার ইউনিট' খ্যাত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জন্য স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসআইএইচ