চবিতে হলের নাম পাল্টে দিল ছাত্রলীগ, প্রশাসন নির্বিকার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রদের অন্যতম আবাসিক হল এ এফ রহমান হল। বর্তমানে এ হলের নাম পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিয়েছে বিজয় হল নামে। এ নিয়ে প্রশাসনের কাছে মেলছে না কোনো উত্তর। বলা চলে একরকম নির্বিকার প্রশাসন। শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের নামে চিকা মারায় পাল্টে গেছে চারতলা বিশিষ্ট পুরো এ হল।
জানা যায়, আবাসিক হলগুলো বর্তমানে দখলে রয়েছে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর কাছে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে হলের বাইরে। অন্যথায় কোনো একটি গ্রুপের অনুসারী হিসেবে হলে উঠতে হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন হলের আসন বরাদ্দ না হওয়ায় তৈরি হয়েছে এমন হল দখলের সংস্কৃতি।
বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের দখলে রয়েছে সর্বোচ্চ তিনটি হল- এএফ রহমান, আলাওল ও সোহরাওয়ার্দী হল। সিক্সটি নাইনের দখলে শাহজালাল হল, সিএফসির দখলে শাহ আমানত হল, এ ছাড়া শহিদ আব্দুর রব হলে রয়েছে বাংলার মুখ, ভিএক্স ও কনকর্ডসহ কয়েকটি গ্রুপের অনুসারীদের। সূর্যসেন হলে রয়েছে এপিটাফ গ্রুপের অনুসারীরা। বছরের বিভিন্ন সময় বগিভিত্তিক গ্রুপগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চিকা মেরে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো হলজুড়ে চিকা মারায় পাল্টে গেছে হলটির আসল রূপ।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে চবি ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি ও বগিভিত্তিক সংগঠনের নামে চিকা মারা-পোস্টারসহ যেকোনো ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না গ্রুপগুলো। চিকা মারা ছাড়াও বগিভিত্তিক সংগঠনের নামে মিছিল মিটিংসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন তারা।
গত ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিপরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় বিভিন্ন ধরনের বগির নামে চিকা মারা, টি-শার্ট, প্লাকার্ড ও স্লোগান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো।’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন নির্দেশের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করছেন না নেতা-কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, প্রথমদিন এসে ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চবিতেও বিজয় ৭১ হল রয়েছে। পরে জানতে পারি এখানে ছাত্রলীগের 'বিজয়' গ্রুপের অনুসারীরা থাকে বলেই হলটির চিত্র এমন।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফ উদ্দিন রুহান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হওয়ায় আবাসিক হলে ঢুকতেই ভয় লাগে। পড়াশোনার চেয়ে এখানে রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর চর্চাই বেশি হয়। হলগুলোতে একবার ঘুরে আসলেই বোঝা যায় এখানে কোন গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। সবসময় মনে হয়, এ বুঝি মারামারি লাগল!
এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ বলেন, শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকে চর্চা হয়ে আসছে। আমরা বগিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে নয়, তবুও হলগুলোর দেয়ালে কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মারে। সেটা শুধু আমাদের গ্রুপ না, প্রতিটি গ্রুপের কর্মীরা এটা করে থাকে। যদি এফ রহমান হলের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব। ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করেছে।
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিষয়টা আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম বগিভিত্তিক সংগঠনগুলোর চিকা মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব, এটা আমারও প্রশ্ন। যেহেতু বগিভিত্তিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নিষিদ্ধ, তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারি না আমরা।
এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, বছরখানেক আগে আমরা যখন পুরো হলটি পরিষ্কার করলাম। এর পরদিনই হলের দেয়ালে চিকাগুলো মারা হয়েছে। এটা আমার কাছেও ভালো লাগেনি। যেহেতু এখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর চিকা মারা হয়েছে। তাই তাদের নেতাদেরও বিষয়টি দেখা উচিৎ। এ ছাড়া আমি একা চাইলে তো হবে না, প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন চিকা অপসারণ করতে হলে। সর্বোপরি হলের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।
এসএন